ঢাকা ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাঁচ বছরে একদিনও চলেনি ৩০ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

পাঁচ বছরে একদিনও চলেনি ৩০ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের মুমূর্ষু মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের দেয়া ৩০ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স চলেনি একদিনের জন্যও। বছরের পর বছর অযত্ন-অবহেলায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি রশিতে বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে খালের মধ্যে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চর মোজাম্মেল, চর জহিরউদ্দিন, চর নাসরিন, সিডার চর, চর উড়িলে বসবাসরত প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জরুরি চিকিৎসাসেবার নিশ্চিত করতে সরকার কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয় সরকার।

বরাদ্দ অনুযায়ী ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এটি হস্তান্তর করা হয়। যার মূল্য ছিল ৩০ লাখ টাকা।

নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি শশীগঞ্জ স্লুইচঘাটের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের ভেতরের একটি খালের মধ্যে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যার বিভিন্ন স্থানের গ্লাস এবং মেশিনের যন্ত্রাংশ ভেঙে গেছে। ভেতরে রোগী শোয়ার ও স্বজনদের বসার সিটগুলোও উধাও হয়ে গেছে। যার ফলে রাষ্ট্রের ৩০ লাখ টাকা গচ্চা যাওয়ার চরম শঙ্কা রয়েছে। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি একদিনের জন্য না চললেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চর জহিরউদ্দিন ও চর মোজাম্মেলে চলাচল বাবদ ৫০ হাজার টাকা তেল খরচের জন্য নেয়া হয়েছে। যদিও তেল খরচের কোনো বিল-ভাউচার দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল বসবাসরত মানুষের জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য সরকার এটি বরাদ্দ দিলেও চরবাসীর একদিনের জন্য প্রয়োজনে আসেনি এটি।

ভোলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ নানা কারণে তজুমদ্দিন উপজেলার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২০ সালের ২২ মে বিকল দেখানো হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি আউটসোর্সিং থেকে মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে চালক হিসেবে ৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্প মাধ্যমে তাকে বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। চরাঞ্চলবাসীর কোনো কাজেই আসেনি এটি। চরাঞ্চলের মানুষ যে কোনো সমস্যায় শশীগঞ্জ স্লুইচঘাট এলাকা দিয়ে ট্রলারে পারাপার হন। রাতে কারো চিকিৎসা বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে ট্রলার বা খেয়ায় পারাপার করেন চরের বাসিন্দারা।

তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন কয়েকটি চরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শুনেছি আমাদের জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তবে আমরা ওই অ্যাম্বুলেন্সের একদিনের জন্যও কোনো সেবা পাইনি অথচ আমাদের চরাঞ্চলের কেউ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত-বিরাতে খেয়া বা ট্রলারে করে নদী পেরিয়ে তজুমদ্দিন সদরে যেতে হয়। তাই আমাদের চরাঞ্চলবাসীর এই দুর্ভোগ লাঘব করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করার দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উত্তম কুমার সরকার বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তারপরও নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বন্ধ থাকার কারণ জানার চেষ্টা করেছি। মূলত কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার প্রকল্পটি বন্ধ হওয়ায় ওই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি বন্ধ রয়েছে। ওই প্রকল্পটি আবার চালু হলে তখন হয়তো এটি চালু করা যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত