কিশোরগঞ্জে আদম ব্যবসায়ীর ফাঁদে একই গ্রামের ১৫ জন
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহজাহান সাজু, জেলা প্রতিনিধি
স্বপ্নের দেশ ইউরোপে ও কানাডায় পাঠানোর লোভনীয় গল্প বলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একই গ্রামের ১৫ জনের কাছ থেকে আদম ব্যবসায়ী নামধারী প্রতারকচক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের নতুনবাজার এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। অভিযুক্তরা হলেন- রাজধানী ঢাকার গুলশান ও শাহজাদপুরে থাকা ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার নামের ট্রাভেলস এজেন্সির মালিক কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলা খুনিয়া পালং ইউনিয়নের সামসুল হকের ছেলে এমএস আজিজুল হক, তার স্ত্রী ম্যানেজিং পার্টনার সাফরিন হক ও ম্যানেজার ইউনুস। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর উত্তরপাড়া এলাকার আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে মো. মামুনুর রহমানের মামা তৌফিকুর রহমান।
বক্তব্যে বলেন, ২০২৩ সালে আগস্ট মাসে আমার ভাগিনা ইতালি প্রবাসী আসরাফুল আলমের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার নামের ট্রাভেলস এর মালিক এমএস আজিজুল হক ও তার স্ত্রী সাফরিন হকের সাথে পরিচয় হয়। তাদের সাথে কথা হলে ভুক্তভোগীদের প্রথমে কানাডার জন্য ওর্য়াক পারমিট জব অফার লেটারের কথা বলে আমার ভাগিনা ছাড়াও শ্রীনগর গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে রুস্তম আলী ও আব্দুল হামিদ মিয়ার ছেলে ইব্রাহীম মিয়ার কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা নিয়ে পাসপোর্টে ভারতীয় ভিসা সংযোজন করে। পরে আমার ভাগিনার কাছ থেকে কানাডা নেয়ার কথা বলে আরো ১০ লাখ টাকা নেন। টাকাগুলো নিয়ে গত বছর ১২ মার্চ ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭ জনকে ভারত ও নেপাল নিয়ে যায়। ভারত ও নেপাল থেকে সকলকেই ভিসা না লাগিয়ে তাদেরকে ২৮ জুন বাংলাদেশে ফেরত আনেন। এছাড়াও শ্রীনগর গ্রামের এলাইচ মিয়ার ছেলে তারেক মিয়া, আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে অন্তর মিয়া, আওয়াল মিয়ার ছেলে মোবারক মিয়া ও কিবরু মিয়ার ছেলে অন্তর মিয়াকে সার্বিয়া নেয়ার কথা বলে অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে আরো ৩৮ লাখ টাকা নেন। ভুক্তভোগী সবার কাছ থেকে প্রতারকচক্র কানাডা ও সার্বিয়া নেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট ও ভিসা ফি বাবদ মোট ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ভারত ও নেপাল থেকে দেশে এসে ভুক্তভোগীরা ঢাকার শাহজাদপুর ও গুলশানে তাদের অফিসে গেলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আমরা স্বজনরা ও ভুক্তভোগীরা যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হই। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষে আমার ভাগিনা মামুনুর রহমান বাদী হয়ে বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও আদিবাসী আইনে একটি মামলা করে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তাধীন। ভুক্তভোগীদের স্বজন বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা প্রতারকদেন খোঁজে কক্সবাজারের তাদের বাড়িতে গেলে সেখানে আমাদেরকে অপদস্থ করা হয়। আমরা কোনো রকমে প্রাণ বাচিয়ে ফিরে আসি। ভুক্তভোগী রুস্তম মিয়া বলেন, আমার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে। আমাকেসহ অন্যদেরকে ইন্ডিয়া নিয়ে ৩ মাস রাখে। পরে এটি পর্তুগালের নকল ভিসা ধরিয়ে দেয়। আমি বর্তমানে সর্বহারা হয়ে আছি। আমার পরিবার নিয়ে মানবেতর জিবন যাপন করছি। ভুক্তভোগী ইব্রাহীম মিয়া বলেন, আমিসহ আরো দুইজনে মিলে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছি। সবাই এখন পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি। ভুক্তভোগী উসমান মিয়া বলেন, আমি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমাকে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই করেনি। দালাল চক্রদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা বলেন, সরকারের কাছে আকুল আবেদন যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। এবং জমাকৃত আমাদের পাসপোর্ট ও ভিসা ফি বাবদ ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাই। অভিযুক্ত আাজিজুল হকের স্ত্রী সাফরিন হক বলেন-আমার স্বামী ট্রাভেসলস এজেন্সি চালায়। বিদেশ পাঠানোর জন্য টাকা নিয়ে থাকতে পারে। মামলার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। ভুক্তভোগীদের বিষয়টি সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ আহমেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করতে দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।