বগুড়ায় বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল চাষের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। শখের বসে বিদেশি ফল চাষ শুরু করা হলেও বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি ফল চাষ করে লাভবান হচ্ছে অনেকেই। একজনের দেখে আরেকজন উৎসাহীত হচ্ছেন বিদেশি ফল চাষে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমের মধ্যে সুর্যডিম, মিয়াজাকি, পালমার, কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, ভারত সুন্দরী, কিং অব চাকাপাত চাষ করা হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে ত্বিন, করোসল, ননি, নাগফল, বারাবা, লোকাট, স্ট্রবেরী, এপ্রিকট, ড্রাগন, হলুদ মালটা, ডকমাই, কাজু বাদাম, এভোকাডো, সাম্মান, আজোয়া খেজুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি ফল চাষ করা হচ্ছে।
বগুড়ার শাহাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া গ্রামের মোহতাসিম বিল্লাহ রেজা কাজু বাদাম চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছে। ঢাকা কলেজ থেকে বিএসএস করে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগসে কিছুদিন চাকরি করেছে তিনি। তারপর চলে যান সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে ফিরে এসে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপর বাবার জমিতে শুরু করে চাষাবাদ। তিনি কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৫০ শতক জমিতে ৮০টি কাজু বাদাম গাছ রোপণ করে। এই চারা রোপণের পর স্থানীয়রা অনেকে তাকে বলেছে এটা পাহাড়ের ফসল। এখানে হবে না। কিন্তু তিনি হতাশ না হয়ে, লোকের কথায় কান না দিয়ে ধৈর্য ধরে চারাগুলোর যত্ন নিয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি কাজু বাদাম চাষে সফল হয়েছে। একই উপজেলার ফুলকোট গ্রামের মিজানুর রহমান ১২ বিঘা জমির ওপর অর্গানিক পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছে। মিজানুর রহমানের বাবা মো. মুজিবুল হক সরকারি চাকরিজীবী।
মিজান বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে এসএসসি, এইচএসসি পাস করেন। পরে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। মিজানুর রহমান জানান, ২০২০ সালে ইউটিউবে ড্রাগনে চাষ দেখে তিনি এ ফলের চাষবাদ করার উদ্যোগ নেন। পরে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ড্রাগন চারা এনে রোপণ করেন। এরপর থেকেই প্রতিবছর ড্রাগনের চাষ করে আসছেন তিনি। এছাড়া নন্দীগ্রাম উপজেলার আমড়া গোহাইল গ্রামের আবু হানিফ বলে, তিনি ২০১৯ সালে শখের বসে পরীক্ষামূলকভাবে ১৬টি সৌদি আরবের আজোয়া খেজুর গাছের চারা রোপণ করে।
সেখান থেকে ভালো ফল পেয়ে তিনি এখন আজোয়া খেজুরের বাগান করেছে। তার দেখে শেরপুর এবং কাহালু উপজেলাতেও অনেকই আজোয়া খেজুর চাষ করছে। বগুড়া সদরের কাজি নুরইল গ্রামের কৃষক আহসানুল কবির ডালিম চাষ করে থাইল্যান্ডের পিংক পেয়ারা, টক বড়ই, ভারতের আম ভারত সুন্দরী ব্যানানা ম্যাংগো। সে জানায়, সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। স্থানীয় বাজারে এই বিদেশি ফলের চাহিদা রয়েছে। এই ফলগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। বগুড়া সদরের মহিষবাথান গ্রামে সামিউল নামের একজন চাষ করেছে মরু অঞ্চলের ফল সাম্মান। তার দেখে সাম্মান ফল চাষ করেছে একই গ্রামের নুরুল ইসলাম এবং গাবতলী উপজেলার মধ্যকাতুলি গ্রামের কৃষক রাশেদুল মোর্শেদ। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বলেন, প্রতি বছরই বগুড়ায় বিদেশি ফল চাষ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর ৪৫ হেক্টর জমি বেড়েছে। জেলার ১২টি উপজেলায় এবছর এক হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে ১৫ প্রজাতীর বিদেশি ফল চাষ করা হয়েছে। বিদেশি ফল চাষে একদিকে যেমন সফলতা পাচ্ছে অন্যদিকে সংসারে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা।