পাবনায় শীতকালীন সবজি বাজারে টানা দরপতনে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। মুলা, বেগুন, ফুলকপিসহ অন্যান্য সবজির অব্যাহত দর পতনে উৎপাদন খরচ ওঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। একটি ফুলকপি উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ টাকা। বিক্রি করতে হচ্ছে ৪-৫ টাকায়। অন্যান্য সবজির দাম গত বছরের তুলনায় এবার অনেক কম। গতকাল সোমবার পাবনার কয়েকটি সবজির পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ, কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ছয় হাজার পিসের মতো ফুলকপি পাওয়া যায়। প্রতি পিস কপির উৎপাদন খরচ পড়ে গড়ে ১০ টাকার ওপর। গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে প্রতি পিস ফুলকপি ১০ টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন ৪ থেকে ৫ টাকা প্রতি পিসে তাদের লোকসান হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় টানা দরপতন হয়েছে বলে কৃষকরা দাবি করেছেন। পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতি বছরের মতো এবারো ৩ বিঘা জমিতে মুলা, বেগুন, ফুলকপি ও শিম আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় ৫০ হাজার টাকার মতো উৎপাদন খরচ পড়েছে।
দাশুরিয়া এলাকার কৃষক মো. শরিফ হোসেন বলেন, তিনি দুই বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। এরই মধ্যে খেত থেকে অর্ধেক বেগুন তোলা হয়ে গেছে। বাজারে প্রতিমণ বেগুণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায়। দাম আরো কমার আশঙ্কা আছে। ফলে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, তা নিয়েই তিনি সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। তবে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছেন গাজর চাষিরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় খানিকটা কম হলেও পাইকারিতে এখন মানভেদে প্রতিমণ গাজর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা দরে। আওতাপাড়া গ্রামের গাজর চাষি রাকিব উদ্দিন জানান, বিঘা প্রতি গাজর আবাদের খরচ ৫০ হাজার টাকার ওপর। এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ১০০ মণ গাজর পাওয়া যায়। তিনি আরো বলেন, এ বছর পেঁয়াজ, মুলা ও ফুলকপি চাষে লোকসান হয়েছে তারা। গাজর চাষে কিছুটা লাভবান হয়েছেন। তবে লাভের এই অংশ চলে যাচ্ছে অন্য সবজির লোকসান পোষাতে।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত পাবনার কৃষক শাজাহান আলি বাদশা বললেন, শীতের মৌসুমে বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক সবজি সারাদেশে সরবরাহ হয়। কিন্তু এ বছর ৫০ ট্রাকের বেশি সবজি যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। গত বছর সবজির চড়া দাম ছিল। ফলে পাবনাতে এ বছর সবজির আবাদ বেড়েছে।
এখন সব জায়গাতে একসঙ্গে সবজি উঠতে শুরু করায় দাম কমে গেছে। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিকুর রহমান সবজির দর পতনের ব্যাপারে বলেন, বর্ষার কারণে এ বছর রবি মৌসুমের সবজি আবাদ একইসঙ্গে শুরু হওয়ায় একসঙ্গে সব সবজি বাজারে এসেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, শীতকালীন মৌসুমে পাবনা জেলায় সবজির আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। এ বছর প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন আশা করা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টন।