ঢাকা ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কৃষিতে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়ছে

কৃষিতে জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়ছে

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা কৃষি পণ্য উৎপাদনে রাসায়নিক বালাইনাশকের পরিবর্তে জৈব বালায়নাশক ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে উপজেলার ২২০ সেক্টর আবাদি জমিতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে কৃষি পণ্য উৎপাদন করছেন কৃষকরা। এতে করে একদিকে কৃষকদের ফসল উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য মানুষের জন্য নিরাপদ হচ্ছে। রাসায়নিক কৃষি উপকরণের উপর্যপরী ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে বাড়ছে দূষণের মাত্রা। জনস্বাস্থ্য হচ্ছে মারাত্বক হুমকির সম্মুখীন। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য এখন কৃষকদের জৈব কৃষির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। সে ধারাবাহিকতায় বালাই ব্যবস্থাপনায় জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে কৃষকদের।

সম্প্রতি কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনির প্রচেষ্টাই এ অঞ্চলের কৃষকরা জৈব বালাইনাশকে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে বারোবাজার, মঙ্গলপৈতা লেবুতলাসহ অন্যান্য এলাকার মাঠের সবজি চাষিরা বর্তমানে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। উপজেলার মাজদিয়া গ্রামের কৃষক লিটন তার দুই বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি সিমের চাষ করছেন। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমি আমার সিম খেতে রাসায়নিক বালাইনাশক এর পরিবর্তে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শক্রমে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছি। আমি সিম খেতে ইয়োলো স্টিক ও ফেরোমন ফাদ টাঙিয়ে রেখেছি। এতে ক্ষতিকর পোকাও মাছি আটকে যাচ্ছে। জৈব বলাইনাশক ব্যবহারে কৃষকের শরীর, ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি হয় না।

এটি ব্যবহারে ক্ষতিকর পোকাগুলো মারা যাচ্ছে আর উপকারী পোকাগুলো জীবিত থাকছে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে গড়ে সব ধরনের পোকা মারা যায়। শুধু তাই নয়; জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে আমরা কৃষকরা স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ভালো থাকছি। অন্যদিকে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে খরচের দিক দিয়ে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ লাভবান হচ্ছি। আগে জৈব বালায়নাশক সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিল না। কৃষি অফিসের পরামর্শে আমরা অনেক কৃষকই এখন জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছি। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনির সাথে কথা হলে তিনি জানান, উদ্ভিজ্জ বালাইনাশক পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না। জৈব বালাইনাশকের প্রভাবে ক্ষতিকর পোকার বৃদ্ধি ব্যহত হলেও উপকারী পোকামাকড়ের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই। মাটির অণুজীব কেঁচো, মাছ, পাখি ও গবাদি পশুর উপর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া করেনা। জমিতে স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গে ফসল তোলা ও ব্যবহার করা যায় এবং জৈব বালাইনাশকের কোন দীর্ঘ মেয়াদি অবশিষ্টাংশ বিদ্যমান থাকেনা বলে পরিবেশের জন্য নিরাপদ। আমরা অব্যাহতভাবে কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের মাঝে জৈব বালাইনাশকের সুবিধাসমূহ তুলে ধরছি। ফলে তাদের মধ্যে সচেতনতা এবং আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও আমরা জৈব বালাইনাশকভিত্তিক প্রযুক্তির তথ্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিকট পৌঁছে দিতে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। দিনকে দিন জৈব বালাইনাশক ব্যবহারকারী কৃষক এবং আবাদি জমির সংখ্যা বাড়ছে। যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখবরও বটে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত