ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের সমারোহ

মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের সমারোহ

রংপুর অঞ্চলে চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর বন্যা পরবর্তী সময় তিস্তা ধরলা, করতোয়া নদীর চরবাসীরা সরিষা ফসল বোনেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ ফসলের আবাদ আরো বৃদ্ধি করার কথা জানায় কৃষকরা। এ বছর রংপুর অঞ্চলে তেমন বন্যা না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আশা করছেন কৃষি অফিস।

বিনা জানায় রংপুর, দিনাজপুর , ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামালী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলাবেষ্টিত তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, করোতয়া উপদিয়ে বয়ে নদ নদীতে ৬৬৮টি চর রয়েছে । এ সব চরে বিনা ১ হাজার ৪ম কৃষককে প্রনোদনা দিয়েছে । এতে ২১ হাজার কেজি বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ অঞ্চলে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন সরিষার খেতে ফুলে ঢাকা। চারদিকে তাকালেই দেখা যায় হলুদ রঙের ফুলের সমারোহ। ফুলের সঙ্গে মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে বেশ ভালো লাগে। সরিষার মাঠে গেলে ফুলের গন্ধে মন ভরে ওঠে। হলুদ রং মন কেড়ে নেয়। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না হলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। জেলার হলুদ ফুলে ভরা সরিষা খেতে অনেক কৃষক মধু চাষ করে বাড়তি আয়ের আশা করছেন। ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা খেত পরিচর্যা করছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৬ মেটিক টন ফলন পাওয়া যাবে। এ সব সরিষা খেতের মধ্যে প্রায় সাড়ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২ হাজারের বেশি মৌমাছির বক্স স্থাপন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২ হাজার কেজি মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি কেজি মধু সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হলে ৫০ লাখ টাকার ওপর মধুতে আয় হবে কৃষকদের। কৃষি অফিসের মতে সরিষা খেতে মৌ বক্স স্থাপন করা হলে ফলন ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।

রংপুর জেলার বিভিন্ন আম বাগানে মৌবক্স স্থাপন করে আরো ৫ হাজার কেজি এবং বিভিন্ন লিচু বাগানে মৌবক্স স্থাপন করে অতিরিক্ত সাড়ে ৪ হাজার কেজি মধু উৎপন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে চাষকৃত সব সরিষা খেত এবং আম ও লিচু বাগানে পরিকল্পিত ভাবে মৌচাষ প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করাসম্ভব হলে এ সব উৎস থেকে প্রতি মৌসুমে মৌমাছির চাষ করে শত কোটি টাকার মধু উৎপাদন করা সম্ভব। এ সব উৎপাদিত মধু দেশের স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

রংপুর সদরের উত্তম এলাকার আমিনুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম বুলবুল মিয়াসহ বেশ কয়েকজন চাষি জানান, বর্তমানে তাদের সরিষা খেতের বয়স হয়েছে ৪০ থেকে ৫৫ দিন। আর দেড় থেকে দুই মাস পরেই এ ফসল ঘরে উঠবে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও তারা সরিষা আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।

তারা জানান, সরিষা আবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম এবং লাভ বেশি। মাত্র ৪টি চাষ দিয়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। এছাড়া দু বার পানি ও একবার সার দিয়েই সরিষার আবাদ করা যায়। ৯০ থেকে ১০০ দিনের এ ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন পাওয়া যায় এক হাজার ৬০০ কেজি পর্যন্ত। নভেম্বরের প্রথম থেকেই এ ফসল বপন করা হয় এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়। বিঘায় খরচ পড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া মধু চাষ করলে বাড়তি আয় রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে সরিষার আবাদ হয়। ফলনও হয় বেশ ভালো। আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নামেন সরিষার আবাদ করতে। এক সময় লালমনিরহাটে আমন ধান কাটার পর বিস্তৃর্ণ জমিগুলো পড়ে থাকত। কিন্তু বর্তমানে লালমনিরহাটে আমন ধানের জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। কৃষকরা আশা করছেন কোনো রোগবালাই না হলে এবার লালমনিরহাটে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম উপজেলায় বিস্তৃর্ণ মাঠে ব্যাপক হারে সরিষার চাষ হয়েছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, লালমনিরহাটে এবার বাম্পার সরিষার আবাদ হয়েছে।

আমরা কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। তাছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সঙ্গে অবস্থান করছে, যাতে কৃষকের কোনো প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। আশা করা হচ্ছে, প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে এবার লালমনিরহাট জেলায় বাম্পার সরিষার ফলন হবে। রংপুর বিনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডক্টর মোহাম্মদ আলী জানান রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বিনা সরিষা চাষ করেছে কৃষক। বিনা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প হতে ও তেল ফসলপ্রকল্প এবং বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৫৮ উপজেলায় কৃষকদের উপকরণ খরচ বিতরণ করেছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, এবার সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। অনেক খেতে মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া রংপুর অঞ্চলে লিচু এবং আম বাগানসহ সরিষা খেতে মৌচাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত