শেরপুরের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি আলু চাষে সাফল্যের গল্প লিখছেন কৃষকরা। এই অঞ্চলের আলু এখন রপ্তানি হচ্ছে জাপানে। যা কৃষকদের অধিক মুনাফার পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথকেও প্রসারিত করছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় কৃষকদের মতে, এই উদ্যোগ শেরপুরের কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বহু বছর ধরে শেরপুরে মিষ্টি আলু চাষ হলেও তা ছিল সীমিত। মূলত স্থানীয় চাহিদা মেটাতেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল।
তবে এবার জাপানের নারুদা কোম্পানির উদ্যোগে জেলার বলাইয়েরচর, জংগলদী, চরমোচারিয়া ও কামারেরচরের ৪৩ জন কৃষক ৯০ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কোকই জাতের মিষ্টি আলু চাষ করছেন। নারুদা কোম্পানি আলু চাষের জন্য বীজ, সার ও কীটনাশক বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে। পাশাপাশি উৎপাদিত মিষ্টি আলু ন্যায্যমূল্যে কিনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কৃষক খোরশেদ আলম ও মো. রফিক জানালেন, প্রতিমণ আলুর দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে উৎপাদন হচ্ছে ৭০-৮০ মণ আলু। যেখানে খরচ হচ্ছে প্রায় ২০-২২ হাজার টাকা। ফলন বিক্রির পর বিঘাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা লাভের সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ায় মিষ্টি আলু চাষের জন্য আদর্শ। গড় তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এই ফসলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। কৃষিবিদরা জানালেন, মিষ্টি আলু শুধু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয় বরং এটি ভিটামিন সি, বি৬, বিটা ক্যারোটিন ও ফাইবারের দারুণ উৎস। এর পাতা ও মূল চিকিৎসা কাজেও ব্যবহৃত হয়।
জাপানের বাজারে রপ্তানি ছাড়াও নারুদা কোম্পানি স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন করছে। শেরপুর কৃষি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়া জানান, এই মিষ্টি আলু দিয়ে সেদ্ধ আলু, চিপস ও মিষ্টি জাতীয় পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। জাপানি ভোক্তাদের কাছে এগুলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শেরপুর সবজিতে উদ্বৃত্ত জেলা হলেও মিষ্টি আলুর বাণিজ্যিক চাষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
তিনি আরো জানান, কোকই জাতের মিষ্টি আলু অত্যন্ত সুস্বাদু এবং এর ছালসহ খাওয়া যায়, যা জাপানের মতো দেশে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। মিষ্টি আলুর এই উদ্যোগ শুধু কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নেই নয় বরং দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে শেরপুরের এই মিষ্টি আলু হয়ে উঠতে পারে দেশের কৃষি খাতের নতুন উদাহরণ।