ঢাকা শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সবজির চারা বিক্রি

শত পরিবার স্বাবলম্বী

শত পরিবার স্বাবলম্বী

শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার প্রতিটি বাজারে শীতকালীন শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চারা বিক্রির জমজমাট হাট বসে। বিশেষ করে নকলা উপজেলা সদর বাজারে ও চন্দ্রকোনা বাজারে সর্বোচ্চ চারা বিক্রি হয়।

নকলা উপজেলা ও পার্শ¦বর্তী জেলা-উপজেলার কৃষকরা শাক-সবজির চারা কিনতে নকলার বাজার গুলোতে আসেন। সপ্তাহে দুইদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার নকলা বাজার এবং রোব ও বুধবার চন্দ্রকোনা বাজার বসে। সকাল ৯-১০টা থেকেই চারার বাজার বসতে থাকে এবং কমপক্ষে রাত ৯টা পর্যন্ত চারা বেচা-কেনা চলে। গতকাল নকলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নকলা উত্তর বাজারে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের পাশে শীতকালীন শাক-সবজিসহ মসলা জাতীয় ফসলের চারা বেচাকেনার হিড়িক পড়ে গেছে।

উপজেলার কৃষকসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা তাদের চাহিদা মোতাবেক চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতারা জানান, তারা এ সব চারা বাড়ির আঙ্গিনায় ও ফসলি জমিতে রোপণের জন্য নিচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ, মরিচ, করলা, বেগুন, টমেটো, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, সিম, বড়বটি, চিচিংগা, বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চারা বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে বর্তমানে পেঁয়াজ, মরিচ, বেগুন, টমেটো, লাউ, কুমড়ার চারা বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। জাত ভেদে মরিচ চারার প্রতি আঁটি (১০ থেকে ২০টি চারা) ২০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতিটি করলার চারা ৩ থেকে ৮ টাকা, টমেটো চারার আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, বেগুন চারার আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, প্রতিটি লাউয়ের চারা ৫ থেকে ১০ টাকা, প্রতিটি কুমড়ার চারা ৫ থেকে ৮ টাকা, পেঁপে চারার প্রতিটি ৫ থেকে ১০ টাকা, বোম্বাই মরিচের চারার প্রতি পিছ ৫ থেকে ১০ টাকা, ক্যাপসিকামের চারা প্রতিটি ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া পেঁয়াজের চারা হাজার বা শতকরা হিসেবে বিভিন্ন দাম বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতারা খাচা হিসেবেও বিক্রি করেন। উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের কিংকরপুর এলাকার সবজি চারা বিক্রেতা মো. রাসেল মিয়া জানান, উপজেলার বানেশ্বরদী, কায়দা, চরবাছুর আলগী, বাছুর আলগা, চরকৈয়া, গজাইরা, কিংকরপুর, চন্দ্রকোনা, বন্দটেকী, নারায়নখোলা, পাঠাকাটাসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত শত পরিবার চারা ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রতি বছরের ন্যায় এবারের শীতেও শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চারা বিক্রির ধুম পড়েছে।

তিনি বলেন, আমি প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন চারা বিক্রি করি। তবে শীত মৌসুমে শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসলের চারা সারা বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি বিক্রি করতে পারি। চাষিরা ও ছাদ ওয়ালা ঘরের মালিকরা চারা কিনে নিয়ে বাসার ছাদে, বাড়ির চারপাশ ও জমিতে রোপণ করেন। এতে তাদের পরিবারের চাহিদা মিটে যায়। আর কৃষকরা নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট শাক-সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন। চারা কিনতে আসা কায়দা এলাকার শফিকুল ও রাব্বীনূর জানান, তারা বাড়ির আঙ্গীনার পতিত জমিতে রোপনের জন্য বেগুন, টমেটো, লাউ, কুমড়া, মরিচ ও পেঁপের চারা কিনতে এসেছেন। তারা বলেন, প্রতি বছর এই মৌসুমে বাড়ির আঙ্গীনার পতিত জমিতে পরিবারের জন্য শাক-সবজির চারা রোপন করি। তা দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটে যায়।

ক্রেতা বানেশ্বরদীর রফিকুল ও ভূরদী গ্রামের এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, বাড়ির আঙ্গীনাসহ জমিতে শীতের শুরুতে বেশ কিছু শাক-সবজি রোপণ করি। এতে একদিকে নিজের পরিবারের জন্য নিরাপদ শাক-সবজি পাচ্ছি। অন্যদিকে নিজের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট শাক-সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় পাই। যাদিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চলে যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, এখন বাজারে যেসব শাক-সবজির চারা বিক্রি হচ্ছে সেগুলো শীতকালীন ফসলের চারা। এই চারা গুলি বাড়ির আঙ্গীনায় রোপণ করা হয়। ফলে শতভাগ নিরাপদ শাক-সবজি খেতে পারেন গ্রামীণ পরিবারের লোকজন। জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রতিটি পরিবারের বাড়ির আঙ্গীনায় শাক-সবজির চারা রোপণ করে খুব সহজেই নিরাপদ পুষ্টি পেতে পারেন। তাতে করে একদিকে নিরাপদ পুষ্টি নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে টাকা বেচে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাই কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিটি কৃষকের বাড়িরে আঙ্গীনায় বছরব্যাপি শাক-সবজি ও স্বল্পজীবনী সম্পন্ন মসলা জাতীয় ফসল রোপন করার পরামর্শ দেয়া হয়। তাতে কাউকে বাজার থেকে বেশি দামে অনিরপাদ শাক সবজি কিনে খেতে হবে না বলেও কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত