কৃষকদের ঘাম ঝড়ানো ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে জেলার জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব পাশে গড়ে তোলা হয় মিরাশার চাষি বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড পরিচালিত ‘মিরাশার চাষি বাজার’। সময়ের সঙ্গে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৭ বছর ধরে এই কৃষি বাজারটি আজ এই অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্নপূরণের বড় মাধ্যম। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও উপজেলা প্রশাসন ও সমবায় কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাত্র ৩২ শতক জমিতে বাজারটির পথচলা শুরু করলেও ১৭ বছরের ব্যবধানে পরিধি এখন তিন একরে পৌঁছেছে। বাজারে এখন সারি সারি দাঁড়িয়ে শতাধিক ঘর। পদ্মাসেতু চালুর পর দৃশ্যপটেও বইছে বসন্তের বাতাস। ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের ফলে চার ঘণ্টার ব্যবধানে জাজিরার সবজি পৌঁছে যাচ্ছে দেশের অন্যতম পাইকারি আড়ত কারওয়ান বাজারে।
ফলে সবজিও নষ্ট হচ্ছে না বললেই চলে। বছরে এই বাজারে এখন ৫০০-৬০০ কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয়। বাজারে কোন মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষকের কোনো খাজনা দিতে হয় না বলে প্রান্তিক উৎপাদনকারীরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। সারা বছর প্রতিদিন বাজারে বেচাকেনা হলেও ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত কৃষিপণ্যে টইটুম্বুর থাকে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, মিরাশার চাষি বাজারটি কেবল কৃষকদেরই সমৃদ্ধ করছে না, পদ্মা সেতুর সুফলকে কাজে লাগিয়ে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণকেও এগিয়ে নিয়েছে বহুদূর। ফলে শরীয়তপুরের কৃষি অর্থনীতির পালে লেগেছে গতিশীল হাওয়া। মিরাশার চাষি বাজারের অন্যতম পাইকার রতন কাজী বলেন, এই বাজারের করলা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচা-কেনা হয়।
এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়েও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, সিলেটসহ কারওয়ান বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে। এ বাজারে তাজা সবজি পাওয়া যায় বলে চাহিদাও অনেক বেশি। সবজির ভরা মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিদিন এখানে ৩ কোটি টাকারও বেশি বেচাকেনা হয়। বাকি ৬ মাসেও এখানে প্রতিদিন সবজি বেচাকেনা হয়। এখানে কৃষকদের কাছ থেকে কোনো খাজনা নেয়া হয় না বলে উপস্থিতিও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌসুমের সময় প্রতিদিন সহস্রাধিক কৃষকের পদচারণায় মুখর থাকে।
জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের খানকান্দি গ্রামের কৃষক মো. কামাল বলেন, মিরাশার চাষি বাজার আমাদের স্বপ্নের নায়ক। বাজারটি চালু হওয়ার আগে দালালদের (মধ্য সুবিধাভোগী) দৌরাত্মের কারণে আমরা অনেক সময়ই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। এই বাজারটি চালু হওয়ার পর থেকে এখন সহজেই ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি। খেত থেকে সবজি তুলে অত্যন্ত সহজে বাজারে নিয়ে আসতে পারছি কম খরচে। তাই আগের তুলনায় আমাদের লাভও হচ্ছে বেশি। তাছাড়া আমাদের দিনের কৃষিকাজ শেষ করে অতিসহজেই এখানে নিয়ে আসতে পারি। বাজারটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
মিরাশার চাষি বাজার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক খোকন খালাসি বলেন, চালু হওয়ার পর থেকেই বাজারের বিক্রেতা ও ক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে কমিটি কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। ৩২ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত বাজারটির পরিধি তিন একর ছাড়িয়ে গেছে। বাজারের নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সার্বিক সহায়তা গ্রহণ করছি।
এখনো পর্যন্ত এই বাজারে বিক্রেতা বা ক্রেতাদের চুরি-ডাকাতির সম্মুখীন হতে হয়নি। শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কাামাল হোসেন বলেন, কৃষকবান্ধব মিরাশার চাষি বাজারটি কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়েও আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছি। বাজারটি জেলার কৃষি অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।