খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করা জনপ্রিয় এক মসলাজাতীয় ফসল হলো আদা। ভেষজ গুণে ভরপুর আদা কাঁচা ও শুকনো দুইভাবেই ব্যবহার করা যায়। তাই সারা বছর ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও থাকে বেশি। কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে বগুড়া মসলা গবেষণাকেন্দ্র উদ্ভাবিত বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি। পতিত জমিসহ বাড়ির আশপাশে ছায়াযুক্ত যে কোনো স্থানে এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়। ৮ বছর আগে মসলা গবেষণাকেন্দ্র বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেও গত ৩ বছর ধরে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ বেড়েছে। পতিত জায়গাসহ বাড়ির আশপাশসহ বিভিন্ন ফলের বাগানে বস্তায় আদা চাষ করা যায়। জমিতে আদা চাষের চেয়ে বস্তায় চাষে খরচ কম, লাভ বেশি আবার মাটিবাহিত রোগের সংক্রমণ কম হয়। অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। স্বল্প খরচে বেশি লাভজনক হওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলার মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়ে বস্তায় আদা নামের এই মসলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বস্তায় আদা চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার চাষিদের মধ্যে। শিবগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় মসলা চাষে অভাবনীয় সাফল্য মিলছে। বাড়ির আঙিনা ও বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে সাথি ফসল হিসাবে বস্তায় আদা চাষ করে বাড়তি আয় করছেন কৃষকরা। মসলা জাতীয় ফসলে রোগ বালাই কম হয় বলে এটি চাষ করতে সার, কীটনাশক ও পরিশ্রম হয় অনেক কম। এরইমধ্যে অনেক উপজেলয় বস্তায় আদা চাষ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, আদার পাশাপাশি কৃষকরা বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তেজপাতা, লবঙ্গ, গেল মরিচ, আলু বখারা, কাবাবচিনি, গোল মরিচ, এলাচসহ নানা জাতের চারা এনে বসতবাড়ির অব্যবহৃত স্থানে রোপল করেছে। তা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলও মিলছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝপাড়া গ্রামে বস্তায় আদা চাষ শুরু হয় গত বছর থেকে। গত বছর স্বল্প পরিসরে আদা চাষ হয়েছে উপজেলার মাঝগ্রামে। মোকামতলা ইউনিয়নের মাঝগ্রামের দেখা দেখি এই বছর বস্তায় আদা চাষ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই গ্রামের বস্তায় আদা চাষি আলম জানান, খেতে আদা চাষ করলে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় খেতের রোপিত আদা পচে যেত। এই পদ্ধতিতে আদা চাষ করলে খেতের জমি নষ্ট হয় না। তিনি মনে করে দেশের প্রতিটি জেলার গ্রামে গ্রামে আদা চাষ করলে বিদেশ থেকে আদা চাষ আমদানি করতে হবে না। দেশে বৈদেশিক মূল্যের অপচয় হবে রোধ। বস্তায় আদা চাষ লাভজনক হওয়ায় মানুষ তাদের অব্যবহৃত জমি অর্থাৎ বসতবাড়ির আশপাশে, উঠানে, বাড়ির ছাদে বস্তায় আদা চাষ করছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নে বাড়ির আশে পাশে ছায়াযুক্ত ঝোপঝাড়, বাড়ির ছাদে এখন শুধু আদা আর আদার চাষ। জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমির প্রয়োজন হয় না।
বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি এবং সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারে। বস্তার আদা স্বচ্ছ। আদা বিক্রির জন্য একটা পৃথক হাট বা বাজার হওয়া প্রয়োজন।