নৈসর্গিক প্রকৃতির শোভা সুন্দরবনে অবস্থিত একটি দ্বীপের নাম পুটনী দ্বীপ বা পুটনী আইল্যান্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এর অন্য নাম দ্বীপচর। একপাশে দিগন্ত জোড়া সমুদ্র আর অন্যপাশে ঘন বনাঞ্চল এরই মাঝ দিয়ে আছে সবুজ ঘাসের প্রান্তর এবং আঁকাবাঁকা খাল। এক কথায় পুটনি আইল্যান্ড অপূর্ব এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। জোয়ার ভাটার সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা একবার ভাসমান থাকে আর আরেকবার দেখা মিলে ধু ধু বালুচর। শেষ বিকালের সূর্য এখানে অস্তযায় আড়পাঙ্গাসিয়া নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। পুটনী দ্বীপে জেলে ও সাধারণ মানুষের তেমন আনাগোনা নেই। তবে আশেপাশের স্থানীয় অনেকেই কাঁকড়া আহরণ করতে পুটনী আইল্যান্ডে এসে থাকেন। এই দ্বীপের জঙ্গল ও খালে হরিণ এবং মাছের বিচরণ থাকলেও জানা যায়- এখানে কোনো বাঘের উপদ্রব ও নেই, নদী দিয়ে চলার পথে চরে দেখা যেতে পারে বাঘের অবস্থান তারা চলাফেরা করে নদীর চরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। চলার পথে দেখা যাবে অসংখ্যা বানর, শুকর ও নানা প্রজাতির পখির মিলনমেলা। এছাড়া রয়েছে নদীর চরে লাল কাঁকড়ার বিচরণ। পুটনী দ্বীপে যেতে চাইলে অবশ্যই বন বিভাগের অনুমতি লাগবে। এক্ষেত্রে অনুমতির জন্য নীলডুমুর, মুন্সীগঞ্জ, কদমতলা বন বিভাগের যোগাযোগ করতে পারেন। অনুমতি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ বা বুড়িগোয়ালীনি থেকে ট্রলারে চেপে দুবলার চর কিংবা হিরণ পয়েন্ট হয়ে পুটনী দ্বীপ যেতে পারবেন। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ এসে ট্রলার বা ছোট বড় লঞ্চ নিয়ে যেতে পারেন পুটনির দ্বীপে। যাওয়ার পথে এক নজর দেখে নেবেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে গড়ে উঠা আকাশ লীনা ইকোট্যুরিজম, কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম। কলাগাছিয়া যাওয়ার সময় আপনার ট্রলারের শব্দ পেলে আপনাকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসবে হাজার হাজার বানর তবে তাদের জন্য মুড়ি বা বিস্কুট নিতে ভুলবেন না। অযথা আপনার ব্যাগ ধরে টানাটানি করতে পারে তারা। এরপর ঘণ্টাখানিক গেলে পড়বে দোবেকী ফরেস্ট কমপক্ষে ২দিন ও ৩ রাতের জন্য অনুমতি নিতে হবে বন বিভাগের অফিস থেকে। পুটনী দ্বীপে রাতযাপনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ক্যাম্পিং করে থাকতে চাইলে জোয়ারের পানি পৌঁছাবে না এমন স্থানে তাঁবু স্থাপন করুন। এছাড়া ট্রলারেও থাকতে পারবেন। হিরণপয়েন্টের নীলকমল, টাইগার পয়েন্টের কচিখালী এবং কাটকায় বন বিভাগের রেস্ট হাউজে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে নিতে পারেন তবে ট্রলারে বা দ্বীপে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে টেনশন করতে হবে না।
