অবাধে বনাঞ্চল উজাড়, আয়তন কমে যাওয়া, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাওয়া, তীব্র খাদ্য ও পানির সংকট ইত্যাদি কারণে কক্সবাজারের বিভিন্ন সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পর কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের পানেরছড়া বনবিটের সমিতিপাড়া এলাকায় একটি মা হাতি লোকালয়ে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে খবর পেয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নূরুল ইসলামের নির্দেশে একটি টিম ঘটনাস্থলে যান। এবং ওই হাতির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পানেরছড়া বনবিট কর্মকর্তা মোস্তফা বিদ্যুৎ জানান, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক এসে ওই হাতির শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। চিকিৎসকে বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, হাতিটি শারীরিকভাবে তেমন বেশি অসুস্থ নয়। খাদ্যের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দৈনিক ৫০ কেজি করে কয়েকদিন চাহিদা মতো খাদ্য সরবরাহ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) নূরুল ইসলাম শারিরীকভাবে অসুস্থ একটি মা হাতি লোকালয়ে আসার সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন, বনাঞ্চল দখল হয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে গেছে। বন উজাড়ের ফলে ধীরে ধীরে গাছপালা কমতে শুরু করেছে। একই ভাবে কমতে শুরু করেছে পশুপাখির খাদ্য। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রভাব, অবাসস্থল, খাদ্য ও পানির সংকট ইত্যাদি কারণে বন্যপ্রাণীরা বন থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে এসে ধরা পড়ছে মানুষের হাতে। এর মধ্যে কিছু প্রাণী মানুষের আঘাতে মারা যাচ্ছে। কখনো কখনো আতঙ্কিত হয়ে লোকজন মেরে ফেলছেন লোকালয়ে আসা বন্যপ্রাণীগুলোকে।
তিনি আরো বলেন, সচেতন মানুষ লোকালয়ে বন্য কিংবা বিপন্ন প্রাণী দেখলে বন বিভাগসহ প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করছে, এমন সংস্থাগুলোকে খবর দিচ্ছেন। এতে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারও করা হচ্ছে বন্যপ্রাণী। ঘটনাস্থলে থেকে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ইশরাত ফাতেমা বলেন, ৩২ বছর বয়সী লোকালয়ে আসা হাতিটি অপুষ্টিতে ভুগছে। তাই, শারীরিক দুর্বলতার কারণে সংরক্ষিত বন থেকে খুড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে না পেরে লোকালয় চলে এসেছে। ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ মতে, গতকাল বিকালে বিভিন্ন ধরনের ৩০ কেজির মতো সবজি সরবরাহ করা হয়েছে। নিয়মমাফিক খাদ্য সরবরাহ করা হলে দুই একদিনের মধ্যে হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রসঙ্গত কক্সবাজার অঞ্চলেও হাতির আবাসস্থল খণ্ডিতকরণ, বন উজাড় এবং বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এই প্রাণী। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আগমনের পর থেকে বনভূমি ধ্বংসের কারণে হাতির আবাসস্থল এবং আন্তঃসীমান্ত চলাচল ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আবাসস্থলের ক্রমশ অবক্ষয় এবং চলাচলে বাধার কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের সঙ্গে হাতি সংঘর্ষ শুরু হয়।