কপোতাক্ষের সৌন্দর্যে অনন্য এখন কপোতাক্ষ পাড়ের সাগরদাঁড়ি গ্রাম। মধুকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর সপ্তাহব্যাপী মধুমেলায় খ্যাতিনামা লেখক কবি সাহিত্যিক ও দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখ লাখ লোকের আনাগোনায় মুখরিত হয় কপোতাক্ষ অববাহিকা। সরকারি ছুটি থাকায় শুক্র ও শনিবার পর্যটককদের আগমন ঘটছে বেশি। শত শত পর্যটক ও পিকনিক পার্টির সদস্যদের আগমনে মনে হচ্ছে সাগরদাঁড়িতে যেন মেলার আগেই বসেছে মেলা। ২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১ তম জন্মবার্ষিকী। তিনি কেশবপুরের কপোতাক্ষ নদ পাড়ের সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জমিদার বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ও মা জাহ্নবী দেবীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার আলিপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এ উপলক্ষে ২৪ জানুয়ারি বিকেলে জমকালো উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। মধুমেলা উপলক্ষে কবির বাড়িঘর, আসবাবপত্র, মধুমঞ্চসহ সকল স্থাপনায় চুনকাম চলছে। সাজানো হচ্ছে মেলাঙ্গনের যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপ, যাদু প্যান্ডেল, হস্ত শিল্প, কুটির শিল্পসহ হরেক রকমের স্টল। দর্শনার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে মেলার ভেতর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী ‘আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি মেলা’। মধুমেলাকে ঘিরে দেশি বিদেশি পর্যটক ও পিকনিক পার্টির সদস্যদের আগমনে সাগরদাঁড়িতে এখন বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। পর্যটকরা সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীর মধ্যে কবির জন্মভিটা, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ বা পুকুর পাড়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন। দেশি বিদেশি পর্যটকদের অধিকাংশই আবার নৌকায় করে ঘুরছেন কপোতাক্ষ নদে। কেউ কেউ করছেন রান্নার কাজ। সংস্কৃতিপ্রেমীরা কপোতাক্ষ নদ পাড়ে গোল করে চেয়ারে বসে মধুকবির লেখা কবিতা পাঠ করছেন। পিকনিকের ছেলে মেয়েদের নাচণ্ডগান, নৃত্য ও নারীদের চেয়ার চিটিং বালিশসহ নানা ধরণের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলায় সাগরদাঁড়ি হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর। সাগরদাঁড়িতে আসা বাগেরহাটের শরনখোলার আব্দুল মজিদ আকন বলেন, তিনটি মাইক্রোতে ৩০ জন কবির জন্মভিটা সাগরদাঁড়িতে এসেছি। ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখেছি। ভালো লেগেছে। তবে মধুপল্লীতে টয়লেট সমস্যা প্রকট। নারীদের টয়লেট ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ঢাকার মিরপুরের গোলাম কিবরিয়া শনিবার পরিবারের ১২ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সাগরদাঁড়িতে। তিনি বলেন, এখানকার সব কিছুই ভালো। সাগরদাঁড়ির মানুষের আপ্যায়ন মুগ্ধ করেছে। এখানে রাত্রিযাপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার আগেই ফিরে যাবো। ঝিকরগাছার আবু মুছা মিন্টু জানান, যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিল কবির নামে সাগরদাঁড়িতে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সারা বছর যেমন হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটতো, তেমনি হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো। প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীতে নিয়োজিত কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান বলেন, মধুকবির টানে তার জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে দর্শনার্থী আসা শুরু করেছে। এখানে পর্যাপ্ত টয়লেট ব্যবস্থা নেই। তবে জেলা পরিষদ ও কেশবপুর উপজেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে একটি বাংলো নির্মাণাধীন। নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। মেলার মাঠের ইজারাদার আকরাম হোসেন খান জানান, মেলার মাঠে আগত সব শ্রেণি পেশার মানুষের বিনোদনের জন্য সব ধরনের আয়োজন করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের সব আইটেম রাখা হয়েছে এবারের মধুমেলায়। তিনি বলেন, গত বছর মধুমেলায় মানুষের ভিড় ছিল বেশি। সে কারণে দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে মেলার মাঠের সমপরিমাণ আর একটি জায়গা ৮ লাখ টাকা দিয়ে ৭দিনের জন্যে ভাড়া নেয়া হয়েছে। এবারের মেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের আগমন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী। কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ২৩ জানুয়ারির মধ্যে কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলার সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়ে যাবে। মানুষের ভিড় সামলাতে বিকল্প একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। মেলায় পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি এবারের মধুমেলায় ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে।