জমিদার হরিচরণ রায় বাহাদুরের বাড়ি ধ্বংসের পথে
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত দেড়শ বছরের পুরনো নকিপুর জমিদারবাড়ি। বাড়িটি আজও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা আসছেন জমিদারবাড়িটি দেখতে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী ১৮৮৮ সালে ৪১ কক্ষের তিনতলাবিশিষ্ট এল প্যার্টানের এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। জেলা শহর থেকে প্রায় ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণে শ্যামনগর থানা সদরের দুই কিলোমিটার পূর্বে নকিপুরে বাড়িটির অবস্থান। বাড়িটি ছিল সাড়ে তিন বিঘা জমিতে। যার বাউন্ডারি ছিল প্রায় দেড় হাত চওড়া প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। সদর পথে ছিল একটি বড় গেট বা সিংহদ্বার। সামনে ছিল একটি শান বাঁধানো বড় পুকুর। পুকুরে সারাবছরই পানি থাকে, গ্রাষ্মের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহেও তা শুকায় না। পুকুরঘাটের বাম পাশে ৩৬ ইঞ্চি সিঁড়িবিশিষ্ট দ্বিতল নহবত খানা। আট স্তম্ব বিশিষ্ট এই নহবত খানার ধ্বংসাবশেষটি এখনো প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকে কালের সাক্ষ্য বহন করছে। বাগানবাড়িসহ মোট ১২ বিঘা জমির ওপর জমিদারবাড়িটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই সামনে সিঁড়ির ঘর। নিচ তলায় অফিস ও নানা দেবদেবীর পূজার ঘর। এছাড়া নিচ তলায় ১৭টি এবং উপর তলায় ৫টি কক্ষ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ভবনটির দৈর্ঘ্য ২১০ ফুট, প্রস্থ ৩৭ ফুট। প্রথমবার ঢুকলে বের হওয়ার পথ বোঝা বেশ কষ্টদায়ক ছিল। চন্দন কাঠের খাট-পালঙ্ক, শাল, সেগুন, লোহার দরজা-জানালা, কড়ি, ১০ ইঞ্চি পুরু চুন-সুরকির ছাদ, ভেতরের কক্ষে গদি তোশক, কার্পেট বিছানো মেঝে ছিল। বাড়িতে ঢুকতে ৪টি গেট ছিল। প্রতিটি ছিল ২০ ফুট দূরত্বে। জমিদার পরিবার ভারতে চলে যাওয়ার পর বর্তমানে বাড়িটির সেই আগের সৌন্দর্য আর নেই। তবে তার দক্ষিণে এখনো একটি পুকুর রয়েছে, যার শান বাঁধানো ঘাটের ধ্বংসাবশেষের দুই পাশে দুটি শিব মন্দির। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজা প্রতাপাদিত্যের পরে হরিচরণ রায় ছিলেন শ্যামনগর অঞ্চলের প্রভাবশালী ও বিত্তশালী জমিদার। তার উদ্যোগে শ্যামনগরে তথা সমগ্র সাতক্ষীরায় অনেক জনহিতকর কাজ হয়েছিল। ১৯১৫ সালে জমিদার হরিচরণ মারা গেলে তার জমিদারির ভার পড়ে দুই ছেলের ওপর। ১৯৩৭ ও ১৯৪৯ সালে দুই ছেলে মারা যান। এর পর ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে। তখন জমিদারের বংশধর তাদের সম্পত্তি রেখে ভারতে পাড়ি জমান। সেই থেকে পড়ে আছে জমিদারবাড়িটি। জমিদারবাড়ির সব জিনিসপত্র চলে গেছে চোর ও লুটেরাদের দখলে। শ্যামনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত বলেন, এরই মধ্যে জমিদারবাড়ির অবৈধ দখলকারীদের স্ব-উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে আদালতে মামলা থাকায় একজনকে উচ্ছেদ করা যায়নি। তিনি আরো বলেন, সাবেক বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ ইতোপূর্বে স্ব-স্ব উপজেলার ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান সংরক্ষণের জন্য ভূমি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তারই নির্দেশে নকিপুর জমিদারবাড়িটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।