টেকসই বালু ব্যবস্থাপনা ও নদী অধিকার নিয়ে গণশুনানি
প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ি দেশে নদী সংখ্যা ১১৫৬। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নদীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার। পদ্মা-মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন বৈধ-অবৈধ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। নদীর বালু উত্তোলন করাও প্রয়োজন। এ সব বিষয়গুলো একটি নিয়মের মধ্যদিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। তারই অংশ হিসেবে অংশীজনদের নিয়ে চাঁদপুরে দুই পর্বে সভা ও গণশুনানি অনুষ্ঠত হয়েছে। গত রোববার চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রথম পর্বে ‘বালুমহাল ও বালুব্যবস্থাপনা কিভাবে টেকসই, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে পারে?’ বিষয়ে বহুপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, নদীর পরিবেশ রক্ষায় অনেকেই জড়িত। এর মধ্যে নৌ পুলিশও কাজ করে। মূলত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে পুলিশ। তবে নদীর বালু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সব অংশীজনের মতামত লাগবে। এছাড়া যারা এটি নিয়ে গবেষণা করেন তাদের মতামত নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। যেহেতু চাঁদপুরে বর্তমানে কোনো বৈধ বালু মহাল নেই, সেকারণে আমরা বালু উত্তোলনের সংবাদ পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বলতে পারি অবৈধভাবে বালুকাটা অনেকটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এসপি আরো বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসে পদ্মা-মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ৩৪টি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। এ সব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৮ জন। এজাহার নামীয় আসামি ৮৪ জন। তিনি বলেন, এই ধরনের ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা প্রয়োজন। বিগত মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আমি জনগণের মধ্যে সচেতনতা পাইনি। বালুমহাল ও বালুউত্তোলনের ক্ষেত্রে একটি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হলে সবার আগে স্থানীয় জনগণকে সচেতন হতে হবে।
এরপর বহুমুখী সমন্বয় প্রয়োজন। এটি বন্ধ করার জন্য নীতিমালা প্রণয়নে আমরা কাজ করতে চাই। বক্তব্য দেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল-ইমরান খাঁন, চাঁবিপ্রবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) বাইজিদ আহমেদ রনি, চাঁসকের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার, চাঁদপুর নদী বন্দরের অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিচালনা বিভাগের পরিদর্শক মো. আশিকুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ গাজী, বাংলাদেশ নৌ-যান পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। প্রথম পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন আয়োজকদের পক্ষে মো. মনির হোসেন। টেকসই বালু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা নিয়ে বক্তব্য দেন পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এইচএম সুমন। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর ও প্রয়োজনীয়তা বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরেন চাঁদপুর পরিবেশ সংরক্ষন আন্দোলন এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক আশিক খান। আর এই বিষয় লিখেছেন অনুষ্ঠানের স্থানীয় আয়োজক মুসাদ্দেক আল আকিব। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ ন ম ফখরুল ইসলাম মাছুম। এই পর্বে জেলে, বালুবাহী বলগেট মালিক সমিতির নেতা ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন। বক্তারা বালু উত্তোলনের ভিন্ন মত দিলেও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঐক্যমত হওয়ার জন্য আহবান জানান। পরে ‘নদ-নদীকে জীবন্ত স্বত্ত্বা ঘোষণা-কিভাবে নদীর অধিকারের স্থায়ী ভিত্তি নির্মাণ করা যাবে?’ বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বের আলোচনায় অংশ নেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি বলেন, একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু। নদীকে তার গতিতে বাঁচতে দিতে হবে। কোন দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার নেই কেউ কি বলতে পারবেন? পৃথিবীর সব দেশেই প্লাস্টিকের ব্যবহার আছে। পৃথিবীর সব দেশেই প্লাস্টিক, বালির যথাযথ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। যা আমাদের দেশে নেই। আমাদের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। নদী দূষণের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থাপনার সমস্যা রয়েছে। আর নদী দখলের ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতি মাসে আমরা পানির মান পরীক্ষা করি। আমাদের ডাকাতিয়া নদীর মান ভাল আছে। আপনার আমার ফেলে দেয়া পলিথিন সবশেষে যাচ্ছে ফসলি জমিতে। যার কারণে আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। নদীতে পলিথিন ফেললে নদী দূষণ হচ্ছে। পলিথিনের কারণে আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে।
যে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমাদের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ডিসি বলেন, চরের কারণে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুক্ষিণ হবে। আমাদের ডুবোচরগুলো কেটে দিতে হবে এবং কাটানো দরকার। এই পর্বে আরো বক্তব্য দেন- চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুর আলম দীন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচারক মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর সাধারণ সম্পাদক লে. মো. শোয়েব, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সোহেল গাজী প্রমুখ। গণশুনানি পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিবশে ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এইচএম সুমন এবং উপস্থাপনায় ছিলেন স্থানীয় আয়োজক মুসাদ্দেক আল-আকিব। দুই পর্বের অনুষ্ঠানে আরডিআরসি ছাড়াও সহযোগী আয়োজক সংগঠন ছিল সিএনআরএস, আরডিআরএস, অক্সপাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।