ঢাকা ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘোড়াঘাটে দুই বছরে বিষ পানে ২৩ জনের মৃত্যু

ঘোড়াঘাটে দুই বছরে বিষ পানে ২৩ জনের মৃত্যু

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় বাড়িতে যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে কীটনাশক দ্রব্য। বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যা। কীটনাশক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণে নানা ধরনের শাস্তির বিধান ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় ঘোড়াঘাটে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠেছে কীটনাশকের দোকান। এদের অনেকের নেই বৈধ কোন লাইসেন্স। গ্রামগঞ্জে অনেকে মুদির দোকানেই কীটনাশক ও সার বিক্রয় করছে। এ সব দোকানে হরহামেশাই মিলছে কীটনাশকসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। কৃষক ও খামারীরা প্রয়োজনের অধিক কীটনাশক এ সব দোকান থেকে কিনছে। ব্যবহার শেষে এ সব কীটনাশকের অবশিষ্ট অংশ বাড়িতে যত্রতত্র ফেলে রাখছেন তারা। ফলে হুমকিতে পড়ছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ। আবার এ সব কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অনেকে। ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই উপজেলায় লাইসেন্সধারী কীটনাশক বিক্রেতা আছে ১৩৬ জন। তার মধ্যে পাইকারি বিক্রেতা ১১ জন এবং খুচরা বিক্রেতা ১২৫ জন। দিনাজপুরের প্রত্যন্ত একটি উপজেলা ঘোড়াঘাট। ছোট এই উপজেলা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিষ পানে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ২৩টি ঘটনায় গত ২ বছরে বিষ পানে মত্যু হয়েছে ২৩ জনের। তার মধ্যে পুরুষ ১০ জন এবং নারী ১৩ জন। এ সব আত্মহননকারীদের মধ্যে বিভিন্ন কীটনাশক এবং পুকুরে ব্যবহৃত ও ইদুর মারা গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মারা গেছে ৭ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও এই সময়ের মাঝে আরো ১৩ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। যথা সময়ে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করায় তারা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া এবং কীটনাশক খেয়ে চিকিৎসা শেষে বেঁচে যাওয়া সবাই পারিবারিক ও মানষিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পরিবারগুলো বলছে তারা রাগ অভিমানের বশে বাড়িতে হাতের নাগালে থাকা কীটনাশক ও গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে। ঘোড়াঘাট থানার ওসি আবু হাসান কবির বলেন, প্রতিমাসেই এই উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য পান করে আত্মহত্যা করেছে। আমরা বিট পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াচ্ছি। গ্রামে গ্রামে উঠোন বৈঠক করছি এবং স্কুল-কলেজে সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেহিদী হাসান বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে বিষপান করা রোগী ভর্তি হয়। এদের অনেকে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যথা সময়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রযোজনীয় চিকিৎসায় রোগীর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিষক্রিয়া রোগীর শরীরে পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ায় এবং উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর সুবিধা না থাকায় রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ কীটনাশক ক্রয়-বিক্রয় করে তবে আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ সব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করে থাকি। তবে কোন কৃষক যদি কীটনাশক কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ফেলে রাখে। আর সেটা ব্যবহার করে যদি কেউ আত্মহত্যা করে, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। এটি কৃষকের অসচেতনতার কারণে ঘটছে। কিটনাশক ক্রয়-বিক্রয়ে তেমন কোন আইন নেই। যে কেউ চাইলেই পরিমাণমতো কীটনাশক দোকান থেকে কিনতে পারেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত