খালে পানির অভাবে কৃষকের দুর্দশা
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর
চাঁদপুর জেলার হাইমচরে অসংখ্য খাল শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। এতে করে এ এলাকার অসংখ্য খালে পানি না থাকায় পানির অভাবে হাজারো কৃষকের চাষকৃত জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়ায় চরম দুর্দশায় পড়েছেন তারা। উপজেলার খালগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ায় হাজারো কৃষকের জীবনে নেমে এসেছে চরম পরিণতি। পানির অভাবে অধিকাংশ মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, এতে রোপিত চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কমলাপুর গ্রামের কৃষক, আব্দুল হান্নান খান বলেন, খালে পানি না থাকাতে আমরা ফসল করতে পারছি না। জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে এখন বোরো ধান রোপণ করবো কিন্তু পানি সঠিক সময়ে পাচ্ছি না। এখন আমরা খুবই কষ্টে আছি সামনের দিনগুলোতে যে আমরা কি খাবো বা কীভাবে জীবন বাঁচাবো তার জন্য দিশাহারা হয়ে পড়ছি। যদি আমাদের দ্রুত পানি দেয়া হয় তাহলে আমরা বোরো ধান রোপণ করতে পারবো। আমাদের জীবন টুকু বাঁচাতে পারবো। স্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, দীর্ঘদিন ধরে খালে পানি না থাকার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এতে করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে তাদের এই দুর্দশা অব্যাহতভাবে চলবে। তারা আরো বলেন, এই খালগুলো খনন সঠিকভাবে হচ্ছে না, খালের এক পাশ কাটা হচ্ছে অন্যপাশ কাটা হচ্ছে না। এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষকরা দ্রুত পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানান। চাঁদপুর পওর শাখা-৩, হাইমচর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসান গাজী বলেন, হাইমচর উপজেলায় আমরা দুটি খাল খনন করছি। খালগুলো হচ্ছে ডব্লিউওয়াইসি এবং বিফিফাইভ। বিফিফাইভ খালটি হচ্ছে কমলাপুর থেকে মহজমপুর ব্রিজ পর্যন্ত, ৩ কিলো ১৮৫ মিটার। এবং অন্য আরেকটি ডব্লিউওয়াইসি খাল সেটি টেককান্দি থেকে জনতা বাজার পর্যন্ত ২ কিলো ৫০ মিটার খাল খনন করা হবে। এই দুটি খাল হচ্ছে হাইমচর উপজেলার প্রধান খাল।
কাজ করতে গেলে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসে, আমরা সেই প্রতিবন্ধকতা রেখে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দুই থেকে চার দিনের মধ্যে খালের খননকাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, বোরো মৌসুমে আমার কৃষক ভাইদের বোরো আবাদ করতে তাদের পানির প্রয়োজন হয়। আমাদের হাইমচরে যে দুটি খাল রয়েছে সে খালগুলোতে দ্রুত পানি দেয়ার জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। তাদের খাল খননের জন্য আমাদের পানি ব্যাহত হবে। সঠিক সময়ে যদি কৃষকরা পানি না পায় বোরো আবাদ বিগ্ন হবে। দ্রুত সময়ে যেন কৃষকরা পানি পায় সে জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্বিতীয়বারও চিঠি প্রদান করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, আমরা বেশ কয়েকদিন যাবত অভিযোগ পেয়ে আসছি বিফিফাইভ খালটি খননে অনিয়ম হচ্ছে। তাই আজকে আমি খাল খননের স্থানে পরিদর্শনে গিয়েছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলে দিয়েছি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে খাল খনন শেষ করেন। এবং সঠিকভাবে খাল খননটি করেন। আমি আশাকরি এই খাল খননের মাধ্যমে কৃষকদের দুঃখ দুর্দশা দূর হবে এবং উপজেলার বিভিন্ন স্থানের জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে যাবে। গত মঙ্গলবার দুপুরে বিফিফাইভ খাল পরিদর্শন শেষে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রামপুর বাজার সংলগ্ন নজির চেয়ারম্যান পোলের সামনে ডাকাতিয়া নদী থেকে আশা খালের মুখে বাদ দেয়া স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলীসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের স্থানে যেতে দেখা গিয়েছে।