বিক্ষোভে যোগ না দেয়ায় পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুর

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল বুধবার সকালে একটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে অপর একটি কারখানার শ্রমিকরা। এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীসহ বেশ কয়েক শ্রমিক আহত হয়েছেন। ওই কারখানাসহ পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর আশপাশের কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এলাকাবাসী, কারখানার শ্রমিক-কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক কামরাঙ্গীরচালা এলাকায় ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেড নামে কারখানায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। গত সোমবার রাতে কারখানা ছুটি শেষে বাসায় ফেরার পথে মৌচাক এলাকায় জহির উদ্দিন নামে এক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করে ছিনতাইকারীরা। শুধু ওই এলাকাই নয়, উপজেলার মৌচাক, তেলিচালা, কামরাঙ্গীরচালাসহ বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকরা প্রায়ই ছিনতাইকারীদের শিকার হচ্ছে। তাদের সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। তাদের কবলে পড়ে শুধু আহতই নয়, নিহত হয়েছেন শ্রমিকসহ আরো অনেকেই। কিন্তু ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় ফুসে ওঠেন শ্রমিকরা। পরের দিন মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার ও শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। এক পর্যায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ মিছিল করে। মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। ওই সময় শ্রমিকরা আশপাশের কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু কামরাঙ্গিরচালা এলাকার ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়নি। তাদের সঙ্গে যোগ না দিয়ে উল্টো বহিরাগত লোকজন আহ্বানকারী শ্রমিকদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনার জের ধরে গতকাল বুধবার সকালে তেলিরচালা এলাকার এটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে গেলেও কাজে যোগ দেয়নি। এক পর্যায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা পাশের ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানায় হামলা চালায়। ওই কারখানার প্রধান গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে হামলাকারী শ্রমিকরা। পরে হামলা চালিয়ে ওই কারখানার প্রতিটি ফ্লোরের গ্লাস, ১০-১২টি গাড়ি, বেশ কিছু মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র, যানবাহনসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল ভাঙচুর করে।

এসময় তাদের হামলায় ওই কারখানার নিরাপত্তাকর্মীসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত দুজন শ্রমিককে উদ্ধার করে সহকর্মীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। এ হামলার ঘটনায় ওই কারখানার শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বেলা ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কিন্তু এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। এদিকে ওই হামলা ও ভাংচুরের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ, গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম, কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ, মৌচাক ফাঁড়ি পুলিশের ওসি মহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হামলার শিকার কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, ছুরিকাঘাতে একটি কারখানার শ্রমিক আহতের প্রতিবাদ ও ছিনতাইকারীদের গেপ্তারের দাবিতে গত মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। তারা মহাসড়ক অবরোধ রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকায় আমাদের কারখানার শ্রমিকরা বের হতে পারেনি। এ নিয়ে আমাদের কারখানার নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হামলা চালিয়ে গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। এতে নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন এবং কারখানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলার শিকার কারখানার এইচ আর এডমিন আখতারুজ্জামান জানান, বহিরাগত শ্রমিকরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই ঘটনার পর কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে কারখানা খোলার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ জানান, ওই হামলার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরো নানা ধরনের কারণ থাকতে পারে। তবে আইগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।