নওগাঁর রাণীনগরে ঐতিহাসিক রক্তদহ বিলের দক্ষিণ অংশে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কের পাশে হাতিরপুল এলাকায় উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র ও পাখি কলোনীর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। জনসাধারণের বিনোদনের জন্য আগামী মঙ্গলবার নওগাঁ জেলা প্রশাসক পর্যটন কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে এমনটাই বলছেন উপজেলা প্রশাসন। রনক্তদহ বিলের একটি বিশেষ অংশ সংরক্ষিত ঘোষণা করে পাখি কলোলি ও মৎস্য অভয়াশ্রম করে বিশেষ বিশেষ জায়গায় লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। এরই মধ্যে এই এলাকায় জনগণের অবাধ প্রবেশ এবং পাখিদের বিরক্ত না করার জন্য লিফলেট বিতরণ করছে স্থানীয় জীবও বৈচিত্র রক্ষা ও পাখি সংরক্ষণ কমিটি। পাখিদের নিরাপদ আবাস স্থল হিসেবে গাছের ডালে ডালে প্রায় ২৫০ মাটির পাতিল ঝুলানো হয়েছে যা এখন শোভা পাচ্ছে। প্রায় ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই বিলের বেশিভাগ অংশ নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলায় মধ্যে বাকি অংশ বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার মধ্যে। ইতিহাস বিদদের মতে ১৭ শতাব্দীর শেষের দিকে ফকির মজনুশাহ আদমদীঘি উপজেলার আশপাশ এলাকায় ইংরেজদের দোসর জমিদারদের হাত থেকে প্রজাদের বাঁচানোর তৎপরতা শুরু করেন। সেই সময় প্রজারা জমিদার ও ইংরেজ শাসক দ্বারা প্রতিনিয়ত আর্থিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতো। সেই সঙ্গে জমির খাজনা পরিশোধ করতে নির্যাতন করা হতো। এমনভাবে প্রজাদেরকে শোসন করার চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে ঠিক সেই সময় ১৭৮৬ সালে এই জনপদে অস্ত্রধারী সন্যাসী ও ফকিরদের সঙ্গে নিয়ে ফকির মজনুশাহের আগমন ঘটে। প্রজাদের পক্ষে প্রতিবাদের এক পর্যায়ে জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী ভয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে ময়মনসিংহে আশ্রয় নেয়। পরে তিনি এদেরকে দমন করার জন্য সেনা নায়ক লেফট্যেনান্ট আইনস্টাইন নেতৃত্বে বড় আকারের বাহিনী রক্তদহ বিলে প্রেরণ করে মজনুশাহের বাহীনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ বাধে। সেই সময় অনেক লোক হতাহতের কারণে বিলের পানি রক্তে লাল হয়ে যায়।
সেই থেকে এই বিলের নামকরণ করা হয় রক্ত দহ বিল। এই বিলে প্রকৃতির ভাণ্ডারে ভরা। বিশেষ করে নানা জাতের দেশি প্রজাতির মাছের সু-খ্যাতি এখনো দেশজুড়ে। মৎস্য সম্পদের নিরাপদ প্রজনন ও ¯স্বাভাবিক বৃদ্ধির লক্ষে বিশেষ এলাকা জুড়ে মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। এই বিলকে ঘিরে রাণীনগরে পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের নির্দেশনা এবং উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে রক্তদহ বিলকে ঘিরে পাখি কলোনী, মৎস্য অভয়াশ্রম ও পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল এর উদ্বোধন করবেন। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষ বিভাগ রাজশাহীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, পাখির জন্য বাসা তৈরি করে দেয়া বা গাছে গাছে কলস বেঁধে দেয়া এটা বিজ্ঞান সম্মত নয়। বরং পাখি দ্বারা নির্মাণকৃত বাসা কেহ নষ্ট করতে না পারে এবং পাখিদের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এমন কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য নজর রাখা প্রত্যেক নাগরিকের তায়িত্ব। তাহলেই পাখিরা নিরাপদ আভাসস্থলে বসবাস করে প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন বলেন, রাণীনগর নদী নালা খাল বিলে ঘেরা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এখানে কোন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। শত বছরের ঐতিহ্য বাহি রক্তদহ বিল। রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কটি নতুন করে নির্মাণ হওয়ায় হাতিরপুল এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলের এই অঞ্চলটি যখন পানিতে ভরে যায় তখন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নৌকা ভ্রমণের জন্য হাজারো পর্যটকরা এখানে ভিড় জমায়। সঙ্গে যোগ হয় পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ।