সামনে সাজানো শীতকালীন সবজির পসরা। গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন সবজি চাষি কামরুল ইসলাম। মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের চাষি কামরুল ইসলাম নিজের জমির সবজি বাজারে বিক্রি করেন। কয়েক হাট ধরে গালে হাত দিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় ক্রেতার আশায়। গতকাল শনিবার দুপুরে গাংনীর সাপ্তাহিক হাটে কামরুলের মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এভাবেই বসে ছিলেন। সবজি বিক্রেতা কামরুল ইসলাম জানান, তিনি সারা বছরই নিজের জমিতে সবজি আবাদ করে নিজেই বিক্রি করেন।
এতে তার লাভ একটু বেশি হয়। এক কেজি পালং শাক বিক্রি করে ৫ টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাঁধাকপি বিক্রি করতে হচ্ছে ২-৫ টাকা কেজিতে। এই দামে সবজি বিক্রি করে খেত থেকে ফসল তোলার মজুরি খরচই হচ্ছে না। গতকাল শনিবার জেলার হাটবাজারগুলোতে ১০০ টাকায় মিলছে ৫ কেজি আলু। বেগুন, টমেটো, লাউ রয়েছে ২০ টাকার মধ্যে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি গেল সপ্তাহের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা কেজি এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। এদিকে মেহেরপুর শহরের পাইকারি সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর সবজির আমদানি। তবে প্রতিটি কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বর্তমানে সবজি বাজারজাত করার জন্য মজুর খরচ আর পরিবহন খরচই উঠছে না তাদের। শীতকালকে সামনে রেখে মেহেরপুরের চাষিরা প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকে। পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসার সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক কফিল উদ্দিন, আব্দুল খালেক, জাহাতাব, নাসির উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন বলেন, এবার হাতে গোনা কিছু কৃষক অগ্রীম সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখেছে। তবে বেশিরভাগ চাষিকে প্রায় প্রতিটি সবজিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে। গতকাল পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শিম ১০ টাকা, পেঁয়াজ ২০ থেকে ৩০, টমেটো ১০ থেকে ২০, বেগুন ১০ থেকে ২০, পালং শাক এককেজির আঁটি ১০ থেকে ১৫, আলু ২০ থেকে ২৫, লাউ প্রতি পিস ১৫, পাতাকপি প্রতি পিস ৫ থেকে ৮, ফুলকপি প্রতি কেজি ৬ থেকে ১০, পেঁয়াজ কলি প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা কেনার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলেও বাজারে অবশিষ্ট থেকে যাচ্ছে শীতের শাকসবজি। প্রতিদিন যে পরিমাণ সবজি আমদানি হচ্ছে সে তুলনায় ক্রেতার চাহিদা অনেক কম। ফলে কৃষকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখে পড়েছে। তবে ক্রেতাদের মনে স্বস্তি দেখা দিলেও সারা বছর নিয়ন্ত্রিত দর নিশ্চিত করার দাবি তাদের। সবজি ক্রেতা জিল্লুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেও আমরা সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ, আলু ও সবজি কিনেছি। এখন কিনছি ব্যাগ ভরে। তবে বাজারে প্রচুর আমদানি, তাই প্রচুর কেনার পরেও সংকট হচ্ছে না। তবে চাষির লোকসানের কথা চিন্তা করে ক্রেতা হিসেবেও আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না। শীতে কম মূল্য এবং অন্য সময় চড়া মূল্য থাকে। এই ব্যস্থাপনা আমরা চাই না। আমরা চাই সব সময় বাজারটা একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাককু। যাতে কৃষকও বাঁচবে এবং ক্রেতাও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। সবজি বিক্রেতা আমিরুল ইসলাম ও হালিম হোসেন জানান, পাইকারি বাজার থেকে কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে আলু এবং সবজি। তবে হাটে বিপুল পরিমাণ আমদানি থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, আমদানির ওপর কাঁচা সবজির দর নির্ভর করে। এবার একসঙ্গে সারা দেশেই বিপুল পরিমাণ সবজি উঠেছে। তাই দর এত নিচে নেমেছে। লোকসান এড়াতে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সবজির আবাদ করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।