ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কম খরচে লাভ বেশি, বগুড়ায় ভুট্টার আবাদ বাড়ছে

কম খরচে লাভ বেশি, বগুড়ায় ভুট্টার আবাদ বাড়ছে

মাটি ও আবহাওয়া ভুট্টা চাষের অনুকূলে থাকায় এ ফসলের আবাদ বগুড়ায় দিন দিন বেড়েই চলছে। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার দাম ও ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছে জেলার কৃষকেরা। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমাণ বেশি। এতে প্রায় শতকরা এগার ভাগ আমিষ জাতীয় উপাদান রয়েছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, বগুড়ায় চলতি বছরে ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরূত্ব রয়েছে। শুধু পশু, মুরগির খামার ও মাছের চাহিদা মিটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টন ভুট্টা দানা প্রয়োজন। বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে ভুট্টা। কৃষকদের জমি বছর চুক্তিতে নিয়ে প্রকল্প আকারেও হয়েছে ভুট্টার চাষ। দাম ভালো পেলে ব্যাপক লাভের আশা কৃষকদের। গত বছর ভালো লাভ পেয়ে এবছর কৃষকরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে ভুট্টার চাষ শুরু করেছে। উপজেলার বাঙালিসহ যমুনা নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চলের যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই শুধু ভুট্টার আবাদ। পুরো চরজুরেই এখন কৃষকরা ভুট্টার জমিতে পানিসেচ, নিড়ানি এবং রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত সময় পার করছে। ভুট্টা চাষে লাভ হওয়ায় বিভিন্ন চরাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জমি বছর চুক্তিতে বর্গা নিয়ে ৫০-১০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার আবাদ করছে। উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের কৃষক বিল্লাল জানায়, গত বছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিল। বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে লাভ হয়। এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছে। সদর ইউনিয়নের অন্তারপাড়া চরের কৃষক সাগর রায় জানায়, গত বছর ভুট্টা চাষ করে তিনি বেশ ভালো লাভ করেছেন। তাই এবছর তিনি ২০ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছে। তাদের দেখাদেখি অনেকে শতবিঘা জমি পর্যন্ত একত্রে প্রকল্প আকারে ভুট্টার আবাদ করেছে। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় তিনি ধানের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করেছে।

তিনি তার কয়েকটি জমিতে উচ্চ ফলনশীল এন এইচণ্ড৭৭২০, এনকে-৯৪০, সুপার সাইন-২৭৪০, এম গোল্ড-৯০০ জাতের ভুট্টা চাষ করেছে। ফলন খুবই ভালো পাবেন বলে মনে করে। একই উপজেলার খামারকান্দি এলাকার কৃষক মো. শফিকুল বারী জানায়, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৬ বিঘা জমিতে এন এইচণ্ড৭৭২০ উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টা আবাদ করেছি। বর্তমানে ভুট্টার খেতে সেচ দিচ্ছি। কোনো প্রাকৃতিক দুরে‌্যাগ না হলে এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে লাভবান হবো বলে আশা করছি। জেলায় চলতি মৌসুমে কৃষকরা অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকছে। আগে যেসব জমিতে কাউন, তিসি, মরিচ, কচুসহ অন্যান্য ফসল আবাদ হতো, সেসব জমিতেও এখন ভুট্টার আবাদ হচ্ছে। ভুট্টার আয়ুষ্কাল ১১০-১৩০ দিন হওয়ায় এবং ফলন ভালো ও চাহিদা থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে। গমের মতো ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হয়, এতে কম পরিচর্যা লাগে। যে কোনো উঁচু জায়গায় চাষ করা যায়, ফলন বেশি হয় এবং মাড়াই প্রক্রিয়াও বেশ সহজ। এছাড়া একই জমিতে সাথি ফসলও চাষ করা যায়। মূলত এ সব সুবিধার কারণেই কৃষকেরা ভুট্টা চাষে এখন বেশি আগ্রহী। ভুট্টা চাষে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর আবাদ বেড়েছে। কৃষকদের ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত