বগুড়ায় মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের হলুদের সমারোহে ভরপুর। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রাম্যমান মৌচাষিরা বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছির খামার স্থাপন করেছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার মৌচাষিরা জানায়, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি পাঁচ থেকে সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। শুরুর দিকে সরিষার ক্ষতি হবে ভেবে কৃষকেরা মৌবক্স বসাতে আপত্তি করলেও কৃষি অফিসারের পরামর্শে এখন এলাকায় মৌ চাষ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এবছর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মৌচাষিরা তাদের শত-শত মৌবাক্স নিয়ে বিভিন্ন গ্রামের জমিতে স্থাপন করেছে পরবর্তীতে বাক্সগুলো সরিষা খেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখে। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ ও শ্রমিক মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় দুই থেকে তিন হাজারের মতো পুরুষ ও শ্রমিক মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে ক্ষেতের পাশে স্থাপিত বাক্সেই। ৭ থেকে ১০ দিন পর মৌচাকে মধুর নিষ্কাশন যন্ত্র দিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় মধু। এতে প্রতি ১০ দিনে মৌকলনী থেকে প্রতি বাক্সে ৩ থেকে ৪ লিটার মধু সংগ্রহ করেন তারা। মৌসুম শেষে মৌমাছিদের খাবার হিসাবে ডাল ও চিনি মিশ্রিত করে পানি দেয়া হয়।
এ নিয়ে কথা হয় মৌচাষি নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, অভাব অনটনের কারণে সংসারে খরচ চালানো খুব কষ্ট হচ্ছিল। কোনো উপায় না পেয়ে বন্ধুর পরামর্শে ভ্রাম্যমাণ মৌচাষের উপর ট্রেনিং নেই। ট্রেনিং শেষে বন্ধুর কাছ থেকে কিছু বাক্স নিয়ে নিজে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করতে থাকি। ১৩ বছর ধরে মধুর সংগ্রহের পেশায় জড়িত আছি। এবার দুপচাঁচিয়ার সাজাপুর এলাকায় নিজস্ব ১২০টি মৌচাকের বাক্স স্থাপন করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকলে সরিষার ফুল থেকে মৌ খামারের মাধ্যমে এবার বেশ লাভবান হওয়া যাবে। প্রতি সপ্তাহে ৯ হতে ১২ মণ মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি লিটার মধু ৪০০ টাকা দরে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি এসে মধু কিনে নিয়ে যায়। সরিষা ফুল থেকে মৌচাষের ফলে একদিকে দেশের যেমন মধুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে পাশাপাশি সঠিক পরাগায়নের মাধ্যমে জমিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।