ঢাকা ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাউল গানের অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র

লালন সাঁই চত্বরের দৃষ্টিনন্দন একতারা
বাউল গানের অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র

‘একতারা’। তারের মধ্যে মনের আকুতি, হৃদয়ের অভিব্যক্তি। তারের মধ্যে সুর ঝঙ্কারে বিলাপ অনুভূতি। মনের আকুতিতে সমাজের জঞ্জাল দূর করার চেষ্টা। যা মানবতা ও নৈতিকতার চেষ্টা হিসেবে আদি সময় হতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন ফকির লালন সাঁই। সেই থেকেই বাউল গানের অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র হয়ে রয়েছে এই ‘একতারা’। বাউল ছাড়া যেন বাদ্যযন্ত্রটি অন্য কোনো শিল্পীর হাতে একেবারেই বেমানান। তিনি যতো গুণী শিল্পীই হোন না কেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্র্থীদের নজর কাড়ে ছেঁউড়িয়ায় স্থাপিত ভাস্কর্য এই একতারা। অনেক দর্শনার্থী একতারা’টির পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে করেন ক্যামেরাবন্দী। তুলেন বিভিন্ন ভঙ্গিতে ‘সেলফি’। একতারা আজ বাংলার লোকজ এক বাদ্যযন্ত্র। একটি তার বিশিষ্ট বলেই এটি একতারা নামে অভিহিত। তবে একতারা আবিষ্কারের ইতিহাস সুনির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় অন্ততঃ এক হাজার বছর ধরে এই বাদ্যযন্ত্রটি ব্যবহার হয়ে আসছে।

তবে অনেক বাউল শিল্পীই মনে করেন, লালন শাহের কালেই জন্ম একতারার। তারা মনে করেন ফকির লালন শাহ তার মনের ভেতর উদয় হওয়া কথাগুলো ভক্তদের মধ্যে প্রচারের সময় কথাগুলো আরও মধুময় করে তোলার জন্য কথার ভাঁজে ভাঁজে তালের অনুভব থেকেই একতারার জন্ম।

তবে জন্ম যখনই হোক না কেন, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির স্বকীয়তা আর ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এই বাদ্যযন্ত্রটি অকৃত্রিমভাবে বহমান রয়েছে একতারা নামে। যন্ত্রটির বাদন ভঙ্গি আর সুরের মূর্ছনায় আজও খুঁজে পাওয়া যায় মাটির ঘ্রাণ। আর এই বাদ্যযন্ত্রটি দিয়ে বাউল-সাধকরা সুরের যে বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। জীবন কাব্যকে লৌকিক মন্ত্রে আবদ্ধ করে সাধন ও সিদ্ধির মাধ্যমে উপায় খুঁজতে লালনের একতারা সব সময় মানুষের মনে প্রাচুর্যের স্পর্শ করে গেছে। কালের প্রবাহে তাই ভাব শক্তির বিদ্রোহে এখনও এই একতারা সুরের শক্তিতে উপায়ক বিষয় হিসেবে লালন গানে ভাব এবং ভক্তিকে সংরক্ষণ করে চলেছে।

‘এখনও একতারা’য় লালন কথা কয়’ অনেকে অনেক বলে, সব কথা কি রাখা যায়’ লালন ছিলেন জ্ঞানের পাখি, গানের পাখি, গান শুনিয়ে করত সুখী’ একতারা হাতে বাউল শিল্পীর এমন গানই বলে দেয় ফকির লালন সাঁইয়ের কাছে একতারা ছিল কত প্রিয়। একতারা হাতে তিনি দরাজ কন্ঠে গানের সুর তুলতেন। লালনের সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই একতারার আদলে ছেঁউড়িয়ায় আঁখড়াবাড়ি চত্বরে স্থাপন করা হয় দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য্য ‘একতারা’।

লালন স্মরণোৎসব ও তিরোধান দিবসে আসা দর্শনার্র্থীদের নজর কাড়ে এই একতারা। লালন সাঁই পাকা লাউয়ের ‘বস’ দিয়ে তৈরি একতারা হাতেই গান গাইতেন। তাইতো বাউল গানের বিশেষ করে লালনের গানের অন্যতম অনুসঙ্গ একতারা ভাস্কর্যটি লালন সমাধির ঠিক সামনেই স্থাপন করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির এই একতারা দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্র্থীদের কাছে পেয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। অনেক দর্শনার্থী এর পাশে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাবন্দি করেন নিজেকে। তুলেন বিভিন্ন ভঙ্গিতে ‘সেলফি’।

লালন একাডেমি সূত্র জানায়, ক্রংকিটের ঢালায় দিয়ে তৈরি মাটি থেকে কাঠামোসহ একতারাটির উচ্চতা ১৬ ফুট। লাউ পাকলে যে রং হয়, সেই রং দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই একতারা। তাতে এক হাতের আঙুল রয়েছে একতারার তারে। লালন একাডেমির সেলিম হক বলেন, একতারাটি তৈরির কাজটি করেছেন কুষ্টিয়ারই কৃতি সন্তান জাকারিয়া ইসলাম মিতুল। প্রবীণ বাউল ও লালন অনুসারী ফকির নহির সাঁই বলেন, ‘লালন শাহ একতারা হাতে শিষ্যদের নিয়ে গানের মজমা বসাতেন। তখন মূলত একতারা দিয়ে তিনি গানে সুর তুলতেন। তিনি দারুণ একতারা বাজাতেন। এখন আমরা যারা গান করি তারও একতারা হাতেই গান করে থাকি। তাই মাজারে একতারা নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে লালন ফকিরের স্মৃতিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত