কুষ্টিয়ায় বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে আট বছরের এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির দোকান ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল শনিবার বলা ১২ টার দিকে সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর ইউনিয়নের শিবপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত দোকানির নাম সাগজত (৫০)। তিনি একই এলাকা থেকে একটি মুদি দোকান চালান। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিশুর মা জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তার ৮ বছরের কন্যা শিশু সাগজতের দোকানে যায়। সে সময় তার ঐ মেয়ের সঙ্গে তার ৮ মাস বয়সী আরেকটা মেয়েও ছিল। তাকে কোলে নিয়ে দোকানের সামনে গেলে সাগজত তাকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে দোকানের মধ্যে ডেকে নেয়। এরপর ভুক্তভোগী শিশুর কোলে থাকা শিশুকে খাঠের উপর বসিয়ে রাখতে বলেন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুটির প্যান্ট খুলে মেয়ের স্পর্শকাতর অঙ্গে একাধিকবার স্পর্শ করতে থাকে। মেয়ে বাড়িতে এসে বিষয়টি জানালে আমি শাশুড়িসহ পাড়া প্রতিবেশী বেশ কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে সাগজতের দোকানে যাই। তার কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। সে সময় সবাই মিলে তাকে গালিগালাজ দিয়ে স্থানীয় ক্যাম্প আইসিকে ঘটনাটি অবহিত করি। সেসময় ক্যাম্প আইসি আমাদেরকে থানায় ও হাসপাতালে যেতে বলেন। এই সব জায়গায় গেলে অনেক টাকা খরচ হবে ভেবে আর যায়নি। এলাকাবাসী জানায়, সাগজতের বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এর আগের বার ভুক্তভোগী মেয়েটির বয়স ১৪ বছরের হওয়ায় তার দরিদ্র পরিবার লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য হয়।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকেই একটি পক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। তাদের অধিকাংশই একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের পদ প্রত্যাশী। শোনা যায়, দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমঝোতা করার চেষ্টা করছেন দৌড়ঝাঁপকারীরা। যার মধ্যে ৫০ হাজার ভুক্তভোগী পরিবার ও বাকি টাকা সমঝোতাকারীরা পাবেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে বিক্ষোভ করতে থাকে স্থানীয় কিছু ছাত্র-জনতা। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা সাগজোতের দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শিশুটির বাবা বলেন, ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। বাড়ি আসলে আমার স্ত্রী ঘটনাটি আমাকে জানায়। রাত অনেক হওয়ায় পরদিন সকালে আমি সাগজতের দোকানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই। তিনি ভুল স্বীকার করে মাপ চাওয়ার পর রাগান্বিত হয়ে তাকে তিনটা ঘুষি মারি। তখন আশপাশের লোকজন এসে ঠেকিয়ে দেয়। পরে একজন এসে মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে, সন্ধ্যার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসে বিচার করবোনে। কিন্তু আমার কোন বিচার করেনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, স্থানীয় কিছু শিক্ষার্থী সাগজোত নামের ওই ব্যক্তির টং দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেছে। ভুক্তভোগী পরিবারটি এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দেইনি। পরিবারটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।