ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হিমাগার না থাকায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

হিমাগার না থাকায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে টমেটো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নানা ধরনের শাক-সবজি উৎপাদন করেন কৃষকরা। অথচ সবজি সংরক্ষণের জন্য এই উপজেলায় কোনো হিমাগার নেই। ফলে কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থের হওয়ার কারণে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কষ্ট করে উৎপাদিত সবজি তোলার সঙ্গে সঙ্গেই বাধ্য হয়ে নামমাত্র দামে সেই ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে।

না হলে ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে। বর্তমানে টমেটোর চাষের বাজারজাত করনের শেষ সময় চলছে। বাজারে পাইকারি মূল্য ৭-৮ টাকা। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। মজুরি ও পরিবহন খরচ না উঠায় চাষিরা খেত থেকে টমেটো তুলতে চাইছেন না। ফলে খেতেই টমেটো বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মাসখানেক পরই সেই টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হবে। কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাধবপুর, আলীনগর, আদমপুর, সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার তিলকপুর, হোমেরজান, পাত্রখোলা, জামিরকোনা, কাটাবিল, নাজাতকোনা, ধলাই পার, নরেন্দ্রপুর, আদমপুর ও ইসলামপুর, ছয়ছিড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। তবে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে কেউ কেউ বারো মাসও টমেটো চাষাবাদ করেন। কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামের সবজি চাষী সাইদুল ও রাজ্জাক বলেন, স্থানীয় বেপারীরা কমলগঞ্জ থেকে স্বল্প দামে কৃষকের শস্য কিনে ট্রাকে করে দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে স্থানীয় ভাবে এখানে একটি হিমাগার স্থাপন করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তুু কেউ কথা রাখছেন না।

তিনি বলেন, বর্তমানে ফসলের মাঠে অনেক ফসল রয়ে গেছে। তবে বাজারে দাম কমে গেছে। তাই টমেটো তোলার মজুরের মুজরী ও পরিবহন ব্যয় না উঠার কারনে মাঠেই কষ্টের ফসল পচে বিনষ্ট হচ্ছে। ভানুগাছ বাজারের আড়ৎদার মো. শরিফ উদ্দিন জানান, গত একমাস ধরে আড়তে টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজি ৮-১০ টাকায়। গত সপ্তাহ থেকে বিক্রি করছি ৩-৪ টাকায়।

বাজারে টমেটোর দাম এতটাই কমে গেছে যার কারনে কৃষক টমেটো তুলতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। তবে যারা আগাম টমেটো চাষ করেছিলেন তারা লাভবান হলেও বাকিরা হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। মাধবপুর ইউনিয়নের টমেটো চাষি সুফিয়ান আহমেদ জানান, আগে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা টমেটো নিতে খেতে আসলেও এখন কোন পাইকার আসছেন না। আগের মতো টমেটোর চাহিদা এখন নাই। টমেটো উত্তোলন, গাড়িভাড়া দিয়ে বাজারে নিয়ে ৩-৪ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় বিক্রির চেয়ে খরছ বেশি, তাই আর খেতে থাকা টমেটো তুলিনা, ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সব। হতাশা ব্যক্ত করে কৃষক মোস্তফা কামাল ও শফিক মিয়া জানান, বিক্রির চেয়ে খরছ বেশি হওয়ায় টমেটো ক্ষেতে তুলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। উপজেলা কৃষি র্কমর্কতা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, এটি একটি পচনশীল ফসল, তাছাড়া এখন অন্যান্য সবজিও বাজারে থাকায় এবং এবছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা দাম পাচ্ছে না। তবে যারা আগাম টমেটো চাষ করেছেন তারা ভালো দাম পেয়েছেন।

এছাড়া এখন যারা টমেটো লাগাবেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারাও ভালো দাম পাবেন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতা মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, উপজেলার কৃষকের কষ্টের ফসল সংরক্ষণের জন্য সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক এর নজরে রয়েছে। আশাকরি দ্রুত এখানে হিমাগার স্থাপন করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত