ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার আহাম্মদপুর গ্রামের চৌধুরীপাড়ায় প্রায় চারশো বছর পূর্বে নির্মিত মোঘল আমলের তৈরি সালেহ্ আহাম্মদ চৌধুরী জামে মসজিদ এক প্রাচীন স্থাপত্যের নাম। তাজমহলের আদলে নির্মিত এ মসজিদটি ১৬৩৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন আহাম্মদপুর গ্রামের চৌধুরী পরিবারের প্রয়াত সালেহ্ আহাম্মদ চৌধুরী। সরেজমিনে দেখা যায়, আনুমানিক ১০ শতক জায়গায় তৈরি মসজিদটির পশ্চিম পাশে আছে বিশাল এক পুকুর। মসজিদের দক্ষিণে আছে কবরস্থান। পূর্ব পাশে রয়েছে আহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া মসজিদের ছাদে শোভা পেয়েছে বড় একটি গম্বুজ ও চারটি মিনার।
মসজিদের ভেতরের দেয়ালে পোড়া মাটির বিভিন্ন কারুকাজে নির্মিত নানা রকম নকশা যা সবার নজর কাড়ে। মসজিদের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, মূল মসজিদটির আকার খুবই ছোট। নির্মাণকালীন সময়ে তিন কাতার মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা রেখেই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় মসজিদ কমিটি ২০০১ সালে পূর্বের মসজিদটি অক্ষত রেখে এর সামনে নতুন মসজিদ ও আধুনিক অজুখানা নির্মাণ করেন।
স্থানীয় মুসুল্লিরা জানান- ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারাকে লালন করে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন প্রাচীন সালেহ্ আহাম্মদ চৌধুরী জামে মসজিদটি। যার সৌন্দর্য দেখতে দেখার জন্য এখনো দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায়। স্থানীয় বাসিন্দা মুরাদ চৌধুরী জানান, ১৬৩৯ সালে আমাদের গ্রামে এ মসজিদটি প্রয়াত সালেহ্ আহাম্মদ চৌধুরী নির্মাণ করেছিলেন। প্রায় চারশো বছরের মতো এই মসজিদের বয়স। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন বর্তমানে আমরাও নামাজ আদায় করতেছি। মসজিদটি সরকারি উদ্যোগে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা গেলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারবে।
মসজিদটির ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া আহমেদ বলেন, আমি কিছুদিন আগে থেকে এই মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। আমি এসে শুনেছি এ মসজিদের প্রায় চারশো বছর হয়ে গেছে, এটা শুকরিয়া আদায়ের বিষয়, আলহামদুলিল্লাহ। এত পুরনো একটি মসজিদে ইমামতি করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। সালেহ্ আহাম্মদ চৌধুরী জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে এ মসজিদটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বপ্রথম মসজিদ। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে পুরনো এই মসজিদটির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য মসজিদটি সংস্কার করে সংরক্ষণের জন্য আহ্বান জানান।
মসজিদটি সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যাপারে জানতে চাইলে আহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও লাউর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই মসজিদটি আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য, আমাদের গর্বের বিষয়। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো মসজিদটি সংস্কার করে সংরক্ষণের ব্যাপারে। তাছাড়া আমি আমার সাধ্যমতো সহযোগিতাও করবো।