ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কম খরচে লাভ বেশি সূর্যমুখী চাষে

কম খরচে লাভ বেশি সূর্যমুখী চাষে

হলুদ রঙের ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর মন মাতানো ঘ্রাণ মুখরিত হয়ে উঠেছে পদ্মা নদীর চরে আবাদকৃত সূর্যমুখী ফুলের জমিতে। উঁচু করে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি সূর্যমুখী ফুল। বাতাসে দুলতে থাকা ফুলগুলো যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সূর্যমুখী চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন পন্মা নদীবেষ্টিত চরে ঈশ্বরদী উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন গোপালপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জার্মান আলী।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে সূর্যমুখীর চাষবাদ হচ্ছে। প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও কীটনাশক দেয়ার পাশাপাশি পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে। পদ্মা নদীর চরে আবুল কাশেম জার্মানের চাষকৃত সূর্যমুখী খেতে সারি সারি গাছে ফুটে আছে শত শত হলুদ সূর্যমুখী ফুল। সূর্যমুখী ফুলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ও টিকটক ক্রিয়েটরদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, স্থানীয় দর্শনার্থী ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ দলবেঁধে স্বপরিবারে, ছেলে-মেয়ে, আত্নী-স্বজনও বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসছেন সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য দেখতে। কেউ কেউ সূর্যমুখী ফুল ঘুরে দেখছে, কেউবা আবার ফুলের সঙ্গে সেলফি তুলছে, আবার কেউবা ভিডিও করছে। সূর্যমুখী ফুলবাগান দেখতে আসা নজরুল, হৃদয় হাসান, জোসনা ও শেফালী জানান, সূর্যমুখী ফুলের অপূর্ব সৌন্দর্য মানুষের মন কেড়ে নেয়। বাড়ির পাশেই এরকম ফুল ফোটার খবর পেয়ে আমরা দেখতে এসেছি। উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জার্মান আলী জানান, সূর্যমুখী বীজের কাঙ্ক্ষিত দাম পেলে ধান চাষের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি লাভবান হবেন বলে মনে করেন। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যদিকে আবাদে খরচও কম হওয়ায় এ ফুলের বীজ বেঁচেও লাভবান হওয়া যায়। তিনি ৩৩ শতক জমিতে বারি- ৩ জাতের সূর্যমুখী আবাদ করছি। এতে তার খরচ হয়েছে সাত হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত যদি কোনো আপদ না এলে বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকে ওই জমিতে আট থেকে নয় মণ ফলনের আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, সূর্যমুখী বাজার মূল্য মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। সূর্যমুখী বীজের কাঙ্ক্ষিত দাম পেলে ধান চাষের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বেশি লাভবান হব বলে মনে করি। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যদিকে এ ফুলের বীজ বেঁচেও লাভবান হওয়া যায়।

উপজেলার আড়মবাড়িয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, নদী বিধৌত দোআঁশ, বেলে দোআঁশ এবং এটেল দোআঁশ মাটি সূর্যমুখি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। পোকামাকড় ও রোগবালাই আক্রমণ হলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরামর্শ দিচ্চি। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাবে। ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় সূর্যমুখী ফুল চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর ঈশ্বরদী উপজেলাতে ৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেল সোয়াবিনের বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যসম্মত, এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত। ১০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কেজি তেল উৎপাদন হয়। সূর্যমুখী চাষকৃত জমির উর্বরতার বৃদ্ধি করে। এতে পোকামাকড় আক্রমণ কম করে। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকের কৃষি প্রণোদনা স্বরূপ বীজ, সারসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ বিক্রির জন্যও কৃষকদেরকে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত