ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ উঠছে না

পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ উঠছে না

বৃহস্পতিবার আসলেই ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই হাকডাক শুরু হয়ে যায় কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম বড় পেঁয়াজের বড় হাট কুমারখালীর বাঁশগ্রামে। জেলার নানা প্রান্ত থেকে থেকে ভ্যান, নসিমন, সাইকেলসহ নানা যানবাহনে মণে মণে পেঁয়াজ আসছে। চারিদিকে শোরগোল। ক্রেতা আর বিক্রেতাদের দর দামে সরব হয়ে ওঠে বাজার। এ বছর পেঁয়াজের ভালো ফলন পেয়ে খুশি কৃষকরা, তবে বাজারে এসে মণ খারাপ কৃষকদের। গতবারের থেকে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি কমেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কৃষকরা বলছেন, গত দুই বছর ভালো দাম ছিল পেঁয়াজের। এবার উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে তাও উঠছে না। ৮ থেকে ১৫ টাকা তাদের লোকসান হচ্ছে। রাখার জায়গা না থাকায় অনেকেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে বারি ফিরছেন।

কৃষকদের মণ খারাপ থাকলেও ফুরফুরে মেজাজে ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা। কম দামে পেঁয়াজ কিনে শহরে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি তারা মজুদ করছেন গোডাউনে। সুযোগ বুঝে এসব পেঁয়াজ তারা চড়া দামে বিক্রি করে ফায়দা লুটবেন।

উপজেলার কয়েকটি এলাকার কৃষক ও হাট ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার ৬০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে বীজ, কীটনাশক, পরিচর্যা, শ্রমিক ও পরিবহন বাবদ খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। আবার বর্তমান বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। এতে প্রতি কেজিতে কৃষকের ৮ থেকে ১৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রতি মণ পেয়াজ ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি করতে পারলে তাদের লাভ হতো বলে জানান কৃষকরা। বাঁশগ্রাম বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক সালাম বলেন, এবার পেঁয়াজ উৎপাদন ভাল হয়েছে। তবে বাজারে দাম পড়ে গেছে। লোকাসানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে লাভ হচ্ছে ব্যাপারী ও ফড়িয়াদের। তারা কম দামে কিনে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। আবার মজুদ করছে।

বাঁশগ্রামের মত প্রতি শুক্রবার উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি ডিগ্রি কলেজ মাঠে বসে সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট। এ বাজারেও কৃষক, পেঁয়াজ আর ব্যবসায়ীদের পদচারণে মুখরিত কলেজের সবুজ চত্বর। পেঁয়াজের আকার আকৃতি মানভেদে প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। হাটে আসা কৃষকরা জানায়, এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দাম কম। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক ফজুল শেখ বলেন, ১১ মণ পেঁয়াজ হাটে এনেছিলাম। প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। যা উৎপাদন ব্যয় থেকে ১৫ টাকা কম। এতে করে মন খারাপ। রমজান মাস শুরু হচ্ছে। বাড়িতে কেনাকাটা রয়েছে। দোকানে বাকি আছে। এখন পেঁয়াজ আবাদ করে পথে বসার উপক্রম।

গত বছর একই সময়ে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ছিল হাজার টাকার বেশি। পরে এ দাম আরো বাড়ে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে দাম বেড়ে প্রায় ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে এবার সেই চিত্র নেই। বছরের শুরুতেই কৃষকরা ধাক্কা খাওয়ায় সামনে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ কৃষক। পান্টি ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, দেশে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দাম কম। প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রায় ২৫ টাকা খরচ হয়েছে। সেই পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। দাম এমন থাকলে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষ বন্ধ করে দিবে। কৃষকদের সুযোগ দেয়া উচিত। ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি প্রতি হাটেই ৫০ থেকে ১০০ মণ পেঁয়াজ ক্রয় করেন। এ সব পেয়াজ বিক্রির পাশাপাশি অল্প অল্প করে গোডাউনে রাখেন, পরে বিক্রি করেন। এবার মৌসুমের শুরুতেই দাম কম। বাইরে থেকে পেঁয়াজ আসায় দেশের বাজার দাম পড়ে গেছে। এছাড়া এক সঙ্গে সারা দেশে পেঁয়াজ বাজারে আসায় চাহিদা কম।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আকার আকৃতি ও মান ভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ কেনাবেচা হচ্ছে। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি ও বাইরের পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দাম কম। পান্টি পেঁয়াজ হাটের ইজারাদার এইচ এম আব্দুল্লাহ টিপু বলেন, প্রায় ৫ হাজার মণ পেঁয়াজ আমাদানি হয়েছে হাটে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা হাটে আসেন। তবে দাম কম থাকায় কৃষকের মন খারাপ।

দাম বাড়লে কৃষকরা লাভ পেত। সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে যে পেঁয়াজ বাঁশগ্রাম বাজারে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, মাত্র ১০ কিলোমিটার দুরুত্বে পান্টি বাজারে সে পেঁয়াজ ২৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কেউ কেউ আরো বেশি দামে বিক্রি করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সূফি রফিকুজ্জামান বলেন, জেলায় এ বছর পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা চাষ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৯২০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর। যা প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত