ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বগুড়ার সাদা চিকন সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কারিগররা। অর্ধ শতক ধরে এ অঞ্চলের নারীরা চিকন সেমাই তৈরি করে আসছেন, যা বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বগুড়ার সদর, শাজাহানপুর, গাবতলী ও কাহালু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সেমাই কারখানা গড়ে উঠেছে।
স্থানীয়ভাবে ‘সেমাই পল্লী’ হিসেবে পরিচিত এ সব এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক নারী-পুরুষ সেমাই তৈরির কাজে জড়িত। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও দক্ষতার ফলে এখানকার চিকন সাদা সেমাই দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ঈদুল ফিতরের এক-দেড় মাস আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বগুড়ার চিকন সেমাইয়ের অগ্রিম অর্ডার আসা শুরু হয়। কারখানার মালিকদের আশা, এ বছর কয়েক কোটি টাকার সেমাই বিক্রি হবে। বর্তমানে প্রতি কেজি পাইকারি সেমাই ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শ্যাওলাকাথিপাড়া এলাকার সেমাই কারখানার মালিক মোরশেদা জানান, প্রতিদিন তিনজন নারী শ্রমিকের সহায়তায় তিনি ৩ থেকে ৪ বস্তা ময়দার সেমাই তৈরি করেন। তৈরি হওয়া সেমাই শুকিয়ে প্রতিদিন পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। একই এলাকার আরেক কারখানার মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, আগে ৮ থেকে ১০টি গ্রামে সেমাই তৈরি হতো। কিন্তু এখন শহরের বেকারিগুলোতেও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সেমাই উৎপাদন হওয়ায় ছোট কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। শহরের আধুনিক বেকারিগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাপকহারে সেমাই উৎপাদন করছে, যা স্থানীয় কারিগরদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন করে তুলেছে।
বর্তমানে বেকারিতে উৎপাদিত সেমাই ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ সেমাইয়ের তুলনায় বেশি। ফলে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সেমাই উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছেন। তবে, ঐতিহ্যবাহী হাতের তৈরি বগুড়ার সাদা চিকন সেমাই এখনও ভোক্তাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সরকারি সহায়তা পেলে তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে উৎপাদন বাড়াতে পারবেন এবং প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারবেন।