ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাকরি দেয়ার নামে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

চাকরি দেয়ার নামে ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার এক কৃষক পরিবার। ভুক্তভোগী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক বাচ্চু মন্ডলের ছেলে রাব্বি হোসেন।

রাব্বি হোসেন ১২০ টাকায় বাংলাদেশ পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকরির আবেদন করেন ২০২৪ সালে। প্রথম তিনটি ইভেন্ট নিজ যোগ্যতাই পার হওয়ার পরেই স্থানীয় দালাল সুমন হোসেনের জালে ফেঁসে যায় সহজ-সরল কৃষক পরিবারের সদস্যরা। পুলিশে চাকরি না হলেও ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যায়ক্রমে সুমন দিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে রাব্বির পরিবার। ছেলেকে পুলিশের চাকরি দিতে গিয়ে সর্বশান্ত রাব্বির বাবা এবং মা। টাকা উদ্ধারের জন্য বদলগাছী থানাতে অভিযোগ করেন রাব্বির মা ববিতা বেগম। থানায় অভিযোগের পরে দালাল সুমন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।

অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ লাইন্স গিয়ে প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ে টিকে গেলে লিখিত পরীক্ষার আগ মুহূর্তে প্রতিবেশী এক ভাবির মাধ্যেমে দালাল সুমনের সাথে পরিচয় হয়। এরপরে বিভিন্নভাবে প্রলোভনে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নামে প্রথমে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করে। নগদ ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করেন দালাল সুমন। তবে লিখিত পরীক্ষার আগের দিন চুক্তির বাকি ৭ লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নামে রাব্বির মায়ের কাছে আরও সাড়ে ৯ লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা দিতে রাজি না হলে চাকরি তো হবেই না, সেই সাথে সব টাকা খোয়া যাবে বলে ভয় দেখায়।

পরে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর কাছে থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নগদ টাকা প্রদান করেন দালাল সুমনের কাছে। কিন্তু চাকরি দিতে না পারাই টাকা ফেরত চাইলে সুমন জানায় ১০ লাখ টাকা ফেরত নিতে আরো ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। বাধ্য হয়ে সেই টাকাও সংগ্রহ করে দিয়েছে দালাল সুমনকে। তবে এতেই খান্ত হননি ঐ দালাল সুমন।

পরে তিনি আরও বলেন, ২০ লাখ টাকা ফেরত নিতে হলে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার দাবি করেন এবং বাধ্য হয়ে আরও ১ লাখ টাকা দিতে হয়েছে সুমন দালালের নিকট। তার পরেও টাকা ফেরত দেয়নি ঐ দালাল সুমন। টাকা ফেরত না পেয়ে দিশাহারা ঐ ভুক্তভোগী রাব্বি হোসেন এর পরিবার। দালাল সুমন ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি দেওয়ার নামে এক ব্যক্তির কাছে থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলেও জানা যায়। সেই ব্যক্তির কাছে থেকে টাকা নেওয়ার সময় একটি ব্যাংক চেক প্রদান করেন তিনি।

এ বিষয়ে জহুরুল ইসলাম নামে সিএনজি ড্রইভার বলেন, পুলিশের চাকরি দিতে পারবো বলে সুমন আমার সামনে টাকা নিয়েছে সত্য। তবে চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেয়ার কথা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

টাকা লেনদেন সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন, সাইদুল ইসলাম, আতোয়ার রহমানসহ সকলের উপস্থিতিতে পুলিশে চাকরি দেয়ার কথা বলে চুক্তি বদ্ধ হয়ে এসব টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও জানান তারা। কিন্তু দালাল সুমন এখন আর আমাদের কারো ফোন রিসিভ করেনা। টাকাগুলো কখনো বদলগাছী কপিহাউজ বসে, আবার ভান্ডপুর বাজার এসে কখনো আবার ববিতার বাড়ি থেকে নিয়ে গেছে আমরা তার জলজান্ত প্রমাণ বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে ববিতা বেগম ও রাব্বি হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করে পুলিশে চাকরি পাওয়ার কথা ভেবে টাকাগুলো দিয়েছি। ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত না পেলে স্বপরিবারে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপাই নেই আমাদের। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন এই ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী দালাল সুমনের বিচার চাই। সেইসঙ্গে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের পরিবারকে আত্মহত্যার হাত থেকে রক্ষা করেন ।

বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা হলে অভিযুক্ত সুমন হোসেন বলেন, আমি নিজেও তাদের নামে থানায় অভিয়োগ করার কথা ভাবছিলাম কিন্তু অভিযোগ করিনি। পুলিশে চাকরি দেয়ার তেমন কোন বিষয় নেই। আমি তাদের চিনি না।

কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, দেড় লাখ টাকা নিয়েছি। সেটার চেক পরে দিয়েছি। আমার কাছে তাদের একটি চুক্তিনামা রয়েছে। সেটা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব বলে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।

বদলগাছী থানার ওসি শাহজাহান আলী বলেন, পুলিশে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার বিষয়ে একটি অভিযোগে সুমনের নামে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি মহিলা। অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে কাজ করছি আমরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত