জৈব সারেই গ্রামবাসীর ভাগ্য বদল
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এইচএম ইমরান, ঝিনাইদহ

বাড়ির সামনে দুটি টিনের সেড। সেখানে ১২টি বেডে কেঁচোর সঙ্গে মিশ্রণ করা হচ্ছে গোবর। কোন বেডে সম্পন্ন হওয়া সার তুলে চালা হচ্ছে। কোথাও আবার করা হচ্ছে বস্তাবন্দি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ডাবনা গ্রামের পঞ্চায়ার্ধো নারী উদ্যোক্তা রেবেকা খাতুনের এমন কর্মযজ্ঞ নিত্যদিনের। এই সেডেই উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করে রেবেকা খাতুন হয়েছেন স্বাবলম্বী। জানা যায়, ভ্যানচালক স্বামী আক্তার হোসেনের স্বল্প আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত। কয়েক বছর আগে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন রেবেকা খাতুন। কুড়ে ঘরের বারান্দায় প্রথমে ৩টি চাড়িতে শুরু করেন উৎপাদন। সেই থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি রেবেকার। বর্তমানে তিনি বড় পরিসরে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন এবং স্থানীয় কৃষকদের কাছে এটি সরবরাহ করছেন। এ থেকে হওয়া আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি কিনেছেন জমি, করেছেন বাড়ি। রেবেকা খাতুন এখন এলাকার একজন অনুকরনীয় কৃষি উদ্যোক্তা। তাকে দেখে ওই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট। এমনকি গ্রামের নাম পাল্টে হয়েছে ‘সারের গ্রাম’। পরিশ্রম আর একাগ্রতা থাকলে যে সফলতা অর্জন করা সম্ভব, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই রেবেকা খাতুন। মাটির প্রতি ভালোবাসা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িতেই তৈরি করছেন সার। বিক্রি করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে।
রেবেকা খাতুন বলেন, ‘আগে অভাবে ঠিকমতো খেতে পারতাম না। সন্তানদের লেখাপড়াও করাতে পারিনি। কুঁড়ে ঘরে থাকতাম। তবে এখন সার বিক্রির টাকা দিয়ে বাড়ি করেছি। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। জমি কিনেছি। সংসারে কোন অভাব নেই। আমার দেখাদেখি গ্রামের প্রতিটা ঘরেই এই সার তৈরি হচ্ছে। আমি চাই কোন নারী বাড়িতে বসে না থেকে এই কাজ শুরু করুক। দেশের প্রতিটা ঘরেই আমার মতো রেবেকা তৈরি হোক।’ কৃষি অফিস জানায়, জৈব সার উৎপাদনে অন্যান্য যে কাঁচামালের যোগান লাগে তার মধ্যে ট্রাইকো কম্পোষ্টে ট্রাইকো ডার্মা পাউডার, গরুর গোবর, আখের গাদ, কলাগাছ, কচুরিপানা, ছাই, খৈল, চিটাগুড়, কাঠের গুড়া, সবজীর উচ্ছিষ্ট, ডিমের খোসা, নিম খৈল, হাড়ের গুড়া, শিং কুচি, গাছের পাতা পচা, ব্যবহৃত চা পাতা সহ ইত্যাদি কাঁচামাল লাগে। এগুলো একত্র করে পর্যায়ক্রমে সেডে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে ৪৫-৫৫ দিনের মধ্যে উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার বানানো হয়। আর ভার্মি কম্পোষ্ট বা কেঁচো কম্পোষ্টে গরুর গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানা লাগে। কেঁচো এগুলো খেয়ে যে মল ত্যাগ করে তাই উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার। এসব জৈব সারে পিএইচ, জৈব কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার, সালফার, জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও ম্যাগনেশিয়ামসহ রয়েছে নানা বৈজ্ঞানিক উপাদান। এই জৈব সারের রয়েছে নানা উপকারিতা। ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মান বাড়ায়। সব ঋতুতে সব ফসলে ব্যবহার করা যায়। জৈব সার বীজের অংকুরোদগমে সহায়তা করে। মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মাটির গঠন ও প্রকৃত গুণ রক্ষা করে। মাটির উপকারী জীবাণুগুলোর বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ায়। মাটিতে রস মজুদ রাখতে সহায়তা করে। ফলে অধিক সেচের প্রয়োজন হয় না।