উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। যমুনা সেতু পশ্চিমপাড় সংযোগ মহাসড়কসহ এ জেলার বিভিন্ন মহাসড়কে এরই মধ্যে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ঈদে ঘরমুখো মানুষের আনন্দ বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন কর্মস্থল থেকে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের জেলা সমুহের দূরপাল্লার বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ বাড়ি ফিরছেন। গত সোমবার বিকাল থেকে এ ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে। রেলপথেও নারীর টানে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরছেন ঈদ ঘরমুখো মানুষ।
মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, নির্মাণকাজ, সরু সেতুসহ নানা কারণে ঈদযাত্রায় যানজট, দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ ছিল চরমভাবে। তবে সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা-রংপুর ফোরলেন মহাসড়ক নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ কারণে দুর্ভোগের আশংকা এখন তেমন নেই। ২/১ স্থানে নির্মাণকাজ চলমান থাকায় একটি লেনে যান চলাচল করবে। এতে ওইসব স্থানে যানজটের শঙ্কাও করছেন পরিবহণ চালকরা। উত্তরের মহাসড়কে ঈদযাত্রায় ডাকাতি-ছিনতাইয়েরও আশংকা রয়েছে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর অবস্থানে রয়েছে মহাসড়ক জুড়ে। যমুনা সেতু চালুর পর উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগের অন্যতম রুট হয় সিরাজগঞ্জের ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়ক। এরমধ্যে ৫৫ কিলোমিটার ন্যাশনাল হাইওয়ে। প্রতি বছরই এসব রুটে গাড়ির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে মহাসড়ক জুড়ে যানজট, দুর্ঘটনা দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। কিন্তু মহাসড়ক জুড়ে এখন ফোরলেন চালা হওয়ায় এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে যাত্রী সাধারণ।
বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস চালক ও সুপার ভাইজাররা বলেন, মহাসড়ক এবার যানজটের তেমন আশংকা নেই। তবে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির আশংকা করা হচ্ছে এবং গাড়িতে ঢিল ছুঁড়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অতি সম্প্রতি ডাকাতির ঘটনাও ঘটেছে। মহাসড়ক জুড়ে পুলিশের বিশেষ টহল জোরদার অব্যাহত রাখতে হবে। এতে ডাকাতির কবলে পড়ার আশংকা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
সাসেক-২ প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী মীর আখতার হোসেন লি. এর প্রকল্প ব্যবস্তাপক মো. এখলাস উদ্দিন বলেন, যমুনা সেতু পশ্চিম থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৫টি কালভার্ড, ৭টি ব্রিজ, ৪টি আন্ডারপাস ও দুটি ফ্লাইওভার রয়েছে। এরই মধ্যে ৬টি ব্রিজে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ২টি ফ্লাইওভারের মধ্যে ১টি ফ্লাইভারের কাজ চলমান রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জি ঝাঐল ওভারব্রিজের ঢাকা থেকে বগুড়া অংশ চালু করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ইকোনোমিক জোন ফ্লাইওভারের দুইপাশে দুই লেন করে চালু করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যমুনা সেতু পশ্চিমপ্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল অংশে কোনো প্রকার ট্রাফিক জ্যাম ছাড়াই নির্বিঘ্নে ঈদ ঘরমুখো মানুষ চলাচল করতে পারবে। যমুনা সেতু পশ্চিম থানা ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে যাত্রীদের যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রার লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রবণ ও যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এ সব স্থানে বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মোবাইল টিম ও পিকেট ডিউটি থাকবে। আশা করা হচ্ছে গতবারের চেয়ে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জ উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ এবং এ পথে ৫৫ কিলোমিটার ন্যাশনাল হাইওয়ে রয়েছে। গতবারের চেয়ে হাইওয়ের পরিস্থিতি এবার অনেক ভালো।
এরই মধ্যে ঝাঐল ওভারব্রিজের একটি লেন খুলে দেয়া হয়েছে। এতে হাটিকুমরুল পর্যন্ত আর কোন সমস্যা নেই। তবে হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের চান্দাইকোনা বাজার এলাকায় একটি সিঙ্গেল লেন রয়েছে। সেখানে কিছু জটিলতা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আজ বুধবার ভোর থেকে ৫ শতাধিক পুলিশ মহাসড়কে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে মহাসড়ক পথে অবস্থান করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।