পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ফেনীর ঈদ বাজার কেনাকাটায় সরগরম হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে ঈদের নতুন পোশাক ক্রয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতারা। কেনাকাটায় বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে ফেনীর ঈদ বাজার। শহরের প্রতিটি শপিংমল, বিপণিবিতান, নামী-দামী ব্যান্ডের শো’রুম, হকার মার্কেট ও ফুটপাতগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে নানা শ্রেণির-পেশার মানুষ। ঈদের কেনাবেচায় ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে শহরের প্রতিটি মার্কেট বিশেষ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। এদিকে বখাটেদের উৎপাত বন্ধে ও চুরি-ছিনতাই রোধে সাদা পোষাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে ফেনীর পুলিশ প্রশাসন। এ ঈদে ফেনীতে কয়েকশত কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিমত প্রকাশ করেন।
দেখা গেছে, জেলা শহরে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে। এ সব দোকানের ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছে বাহারি রঙের পোশাক দিয়ে। তবে বাজারে দেশী পোষাকের পাশাপাশি চাহিদা রয়েছে পাকিস্তানি কাপড়ের। বড় বড় ব্র্র্যান্ডের দোকানের চাপে পড়ছে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। পুঁজি দিয়ে টার্গেট পূরণ না হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। এদিকে বখাটে ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে মাঠে রয়েছে সাদা পোশাকধারীসহ পুলিশের একাধিক দল। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের শপিংমলগুলো জমে উঠেছে। ক্রেতারা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পছন্দের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাহারি ডিজাইনের পোশাকে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে সব বিপণিবিতানগুলো। এবার ঈদে মেয়েদের আকর্ষণীয় পোশাকের তালিকায় রয়েছে নায়রা, অরগাঞ্জা, সারারা, ঘারারা, লেহেঙ্গা, স্কাট ও ফ্লোরটার্চ আর ছেলেদের বিভিন্ন জিন্স প্যান্ট, সুতির লং পাঞ্জাবি। পাশাপাশি বাজারে বুটিকসের থ্রি-পিস, কাটা থ্রি-পিস, ভারতীয় শাড়ি, কাতান, সিল্ক, টাঙ্গাইল শাড়ি, তাঁতের শাড়ি, জামদানি বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে বেচাবিক্রির ধুম পড়লেও বিপাকে রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। শহরের গার্টেন সিটির ব্যবসায়ী সমর দেবনাথ জানান, ১৫ই রমজানের পর থেকে বেচা-কেনা কিছুটা বাড়ছে। শেষ রমজানের ঝামেলা এড়াতে অনেকে আগেই কেনা-কাটা শেষ করছে। ছুটির দিনে ক্রেতাদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা ভালো। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামিদামি শোরুমের দিকে ছুটছেন ক্রেতারা। অনেকে আবার অনলাইনেও কেনা-কাটা করছে। শহিদ হোসেন উদ্দিন বিপণিবিতানের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, শুরু থেকে ১৪-১৫ রমজান পর্যন্ত ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। তারা যে পরিমাণ পুঁজি লগ্নি করেছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে তার তিনভাগের একভাগ বিক্রি করতে পারেননি। এবার ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন পোশাক বেশি দামে কিনেছেন, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ভীড় ততই বাড়ছে। সাবিনা ইয়াসমিন নামে একজন ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর জামা কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি। তাই তাদের বাজেট অনুযায়ী কিনতে পারছেন না। তবে নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারছে। মাইমুনা আক্তার নামে এক ক্রেতা জানান, তার ছেলেমেয়ের জন্য জামা কিনতে এসেছেন। কিন্তু অনেক মার্কেট ঘুরেও তার বাজেট অনুযায়ী জামা কিনতে পারছেন না। বেলাল হোসেন সবুজ নামে অন্য এক ক্রেতা জানান, তার পরিবারের আটজনের জন্য জামা-কাপড় কিনেছেন। অনেক দোকান ঘুরেছেন, জামা পছন্দ হলেও দামে পোষাচ্ছে না। তবে শহীদ মার্কেটে এসে কিছুটা সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করতে পেরেছে।
ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মুশফিকুর রহমান পিপুল জানান, শহরে ছোট-বড়, মাঝারি মিলে ১০ হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। প্রতিটি মার্কেটে নিজস্ব নিরাপত্তার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য টহলে থাকায় তুলনামূলকভাবে বখাটে ও চুরি-ছিনতাই নেই বললেই চলে। তাই ক্রেতারা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারছে। জেলায় এবারের ঈদে কয়েকশত কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ফেনী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, নিরাপত্তা ও উৎসব মুখর পরিবেশে ঈদ বাজার নিশ্চিত করতে আমি নিজেই বিভিন্ন মার্কেট পরিদর্শনে এসেছি। শহরের যেসব মার্কেটে লোক সমাগম বেশি হয় সেগুলোতে স্থায়ীভাবে পুলিশ দেয়া হয়েছে। সড়কে চলাচলের উপযোগী করার জন্য যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগকে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া মার্কেটগুলোতে বখাটেদের উৎপাত রয়েছে। তাদের দৌরাত্ম্য এবং কিছু ছদ্মবেশী নারী ছিনতাইকারী ঠেকাতে সাদা পোশাকে ডিবি ও পুলিশ সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন, যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে পারেন।