আমের জেলা হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এ জেলার আম স্বাদে ও গুণে বেশ সুনাম রয়েছে। আমের গাছে গাছে মুকুল থেকে এক গুটি (দানা) বেঁধেছে। ভালো দাম পাওয়ার আসায় মুকুলের পরিচর্চায় ব্যস্ত চাষিরা। তবে দিনে গরম রাতে ঠান্ডা হওয়ায় ঝরে পড়ছে গুটি। এতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে চাষিদের। কিন্তু তারপরও চাষিরা স্বপ্ন বুনছেন ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন।
বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার আংশিক এলাকা। জেলায় যে পরিমাণ আম বাগান রয়েছে তার ৭০ শতাংশ রয়েছে এ সব উপজেলায়। বরেন্দ্র এলাকা হওয়ায় জেলার আম অত্যান্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট। জেলায় আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, আশ্বিনা, বারী-৪ ও গুটি জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় জেলার ৬০ শতাংশ বাগানই আম্রপালি। এ জেলার আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। এমনকি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
এ বছর পর্যায়ক্রমে আম গাছে মুকুলের দেখা মিলেছে। গাছে গাছে যখন মুকুলে ভরপুর তখন ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময়ে একপশলা বৃষ্টি। বৃষ্টিতে মুকুলে পঁচানি রোগ হওয়ায় চাষিদের বাড়তি কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে বিঘাপ্রতি অন্তত দেড় হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে বলে দাবী চাষিদের। প্রতি বিঘা জমিতে আম চাষে সার, কীটনাশক, পানি ও শ্রমিক দিয়ে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। যা থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।
চাষীরা বলছেন- গত বছর আমের পরিমাণ কম হওয়ায় মৌসুমের শুরুতে ভাল দাম ছিল। তবে এ বছর মৌসুমের শুরুতে ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রির আশা। আর সেই আশায় কোমর বেঁধে বাগান পরিচর্চা করা হচ্ছে। মুকুল থেকে গুটি দাঁনা বেঁধেছে। সাপাহার উপজেলার আমচাষি গোলাপ খন্দকার বলেন, আমের মুকুলে যখন ভরপুর ঠিক তখনই অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টি হয়। তারপর থেকে মুকুলে পচানি রোগ দেখা দেয়ায় বাড়তি কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। এতে বিঘাপ্রতি অন্তত দেড় হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। উপজেলার তিলনা গ্রামের আমচাষি ওবাইদুল হক বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। গাছে কাঙ্ক্ষিত মুকুল আসলে পর্যাপ্ত গুটি আসেনি। তারপরও আমরা পরিচর্যা করছি। মনে হচ্ছে এ বছর আমের পরিমাণ কম হবে। আম কম হলে দাম বেশি হবে। পোরশা উপজেলার আমচাষি আবু হেনা বলেন, ২৬ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। যার অধিকাংশ আম্রপালি। আর বাকি টা বারি-৪। আবহাওয়া ভাল যাচ্ছে না। রাতে কুয়াশা ও হালকা শীত হচ্ছে আবার দিনে গরম। এ কারণে গুটি ঝরে পড়ছে। এতে করে আমের পরিমাণ কম হবে মনে হচ্ছে। আমরা বাগানে পানি সেচ ও গুটি ঝরে পড়া রোধে গাছে হালকা করে কীটনাশক স্প্রে করে পরিচর্যা করছি। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন- এ বছর জেলায় আম বাগানের পরিমাণ ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। যা থেকে প্রায় ৪ লাখ টনের অধিক আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আম বাগান। রপ্তানি পরিসর বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জেলায় যে পরিমাণ আম উৎপাদন হবে যার বাজার মুল্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।