চলতি শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার পৌর শহরসহ ২১টি ইউনিয়নে সরকারিভাবে ১০ হাজার এবং ব্যক্তিগত নলকূপের পরিমাণ রয়েছে প্রায় আরো ৪০ হাজার। এতে ১০ হাজার নলকূপে পানি উঠছে না। আবার বেশ কিছু নলকূপে পানি উঠছে একেবারে কম। এতে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।
তীব্র দাবদাহে অধিকাংশ পুকুর, খালে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এবং ইরি ধানের মাঠে সেচ কাজে ব্যবহারিত অনুমোদনহীন সাবমারসিবল গভীর নলকূপ ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে অকেজো হয়ে পড়েছে টিউবওয়েলগুলো। ফলে সুপেয় পানির সংকট বেড়েছে। এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। এতে চাপ পড়ছে অগভীর নলকূপে।
জানা গেছে, নলকূপ স্থাপন করতে আগে ২০ থেকে ৩০ ফুট মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন পানির স্তর মিলছে না ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও। উপজেলায় ২১টি ইউনিয়নের ১০ হাজারের বেশি নলকূপে সামান্য পানি উঠছে। চরফ্যাশন পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়নে সরকারি ভাবে ১০ হাজার ৭৩টি হস্তচালিত নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৫১টি সচল বাকি ২২২টি অকেজো রয়েছে। ২৮টি মেরামত করা হয়েছে (সূত্রে উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়)। তবে বেসরকারিভাবে ও নিজদের স্থাপীত নলকূপের পরিমাণ প্রায় আরো ৪০ হাজার।
উপজেলার জিন্নাগড়, আছলামপুর নীল কমল, হাজারীগঞ্জ, ওমরপুর, কলমীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে কোনো কোনো নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি মার্চ মাসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে বলে জানা যায়। উপজেলার ওমরপুর গ্রামের নাছির মিয়া বলেন, এক মাস ধরেই তাদের নলকূপে অল্প অল্প পানি উঠছিল। এখন কোনো পানিই উঠছে না। নলকূপ ব্যবসায়ী হাজী ইদ্রিস মিয়া বলেন, সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির স্তর মিলছে। তবু পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী নির্ধারিত ডিজাইন মেনে চরফ্যাশন উপজেলায় ব্যক্তিগতভাবে কেউ নলকূপ বসায় না। তাছাড়া সরকারি নিয়ম হলো এক কিলোমিটারের মধ্যে গভীর নলকূপ করা যাবে না। কিন্তু এই নিয়ম কেউ মানছেন না।
উপজেলার কৃষি অফিস বলছে, তাদের অনুমতি নিয়ে উপজেলার ১৭০টির মতো গভীর এবং ৭ হাজার ৯২১টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপীত গভীর ও অগভীর নলকূপের পরিমাণ প্রায় চারগুণ হবে। পানি নিয়ে কাজ করা উপজেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ৮ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্রমেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি হলেও তাতে কোনো প্রভাব পড়েনি সেসব প্রাকৃতিক উৎসে।
এছাড়া অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে ইরি ধানের জমিতে সেচ দেয়া এবং গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে উপজেলার নলকূপগুলোর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। পানিপ্রবাহের উৎস নদ-নদী ভরাট করে দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চরফ্যাশন উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলনের জন্য সাবমারসিবল পা¤েপর অনুমোদন আমার দেই না। মূলত খাল থেকে পানি তুলে কৃষি জমিতে দেয়ার জন্য বিএডিসির ৮২টি সেচ পা¤প রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানায় ১ হাজার ৭১৮টি সেচ পাম্প দিয়ে খাল থেকে পানি তুলে কৃষি জমিতে দেয়া হচ্ছে।
যেসব কৃষিজমির পাশে খাল নেই কিংবা খালে পানি নেই, সেখানকার কৃষকরা অবৈধভাবে সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ থেকে কৃষি জমিতে সেচ দিতে পারে। তবে ওইসব অবৈধ সাবমারসিবলের সংখ্যা জানা নাই। তবে বেসরকারি এ সমীকরনে জানা যায়, এই উপজেলায় প্রায় ১০০ সাবমারসিবল গভীর নলকূপ রয়েছে, যার কোনো সরকারি অনুমোদন নাই।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসাইন বলেন, ‘উপজেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে, তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৬ হাজার গভীর ও ১৭ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। পানি ব্যবহারে আমাদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মেনে পাম্প স্থাপন করলে সমস্যা কিছুটা কমবে। এখন পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। গভীর নলকূপ স্থাপনে নিয়ম মানা নিশ্চিতে নজরদারি বাড়াতে হবে।