কুমিল্লায় অবাধে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সহস্রাধিক স্পটে ভেকু মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটায় ও নিচু জায়গা ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু চক্র। জমির উর্বরতা শক্তির ক্ষতির দিক চিন্তা না করে কৃষকরাও সাময়িক লাভের আশায় মাটি বিক্রি করছেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে কোথাও ফসল উৎপাদন হচ্ছে না, আবার কোথাও জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে গভীর পুকুর-নালায় পরিণত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার কারণে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ কৃষি জমিতে ভুট্টা, ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, মরিচ, বেগুন, ছোলাসহ তিন ফসলের আবাদ করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এ কারণে প্রতি বছর আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। সূত্র জানায়, জেলার লালমাই উপজেলার অন্তত ৩৫টি স্পটে, চৌদ্দগ্রামের অর্ধশত স্পটে মাটি কাটার হিড়িক চলছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় সহস্রাধিক স্পটে কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ নিচু জমি ভরাটের কাজে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঢোলসমুদ্র জলা, পাইকপাড়া, হাজারিপাড়া, আঠারবাগ, আবদুল্লাহপুর, ঘাসিগ্রামসহ অন্তত অর্ধশত স্পটে কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি ব্যবসায়ী ময়নাল হোসেন বলেন, কারো ফসলি জমির মাটি তো জোর করে কাটছি না। কৃষকরা মাটি বিক্রি করে বলেই নগদ টাকায় ন্যায্য দাম দিয়ে মাটি কিনে বিক্রি করি।
তবে স্থানীয়রা জানান, যারা মাটি নিচ্ছেন তারা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী। সবকিছু ম্যানেজ করেই মাটিদস্যু চক্র নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ফসলি জমি থেকে কোথাও ৩ থেকে ৫ ফুট, আবার কোথাও ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ সব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাকিয়া সরওয়ার লিমা বলেন, বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। বেশ কয়েকটি ভেকু, ড্রেজার মেশিন জব্দ করে ধবংস করা হয়েছে এবং জড়িতদের অর্থদণ্ড করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, কৃষি জমির উপরিভাগের মাট কাটলে জমি তার উর্বরতা নষ্ট হয়। যেভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে ফসলি জমির পাশাপাশি ফসল উৎপাদনও আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। তাই ফসলি জমির মাটি বিক্রি না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার সাংবাদিকদের জানান, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। এ কাজের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির বিধান রয়েছে। কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।