ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সন্তানরা খোঁজ নেন না বৃদ্ধা মায়ের

খোলা আকাশের নিচে বসবাস
সন্তানরা খোঁজ নেন না বৃদ্ধা মায়ের

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা মেয়েদের জমি লিখে দেয়ায় ছেলে সন্তানরা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ৯০ বছরের বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে। খোলা আকাশের নিচে তার জায়গা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মথুরা ইউনিয়নের জগৎনগর গ্রামে। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের স্বামী মহাতাব গত ৮ বছর আগে মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তিনি প্রায় ৪০ বিঘা সম্পত্তি রেখে গেছেন। তাদের আট সন্তান। এরমধ্যে তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে মতাহার স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, অপর দুই ছেলে মশিউর ও আতোয়ার কৃষিকাজ করেন। আর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর রেখে যাওয়া ৪০ বিঘা সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ার নিয়ে ছেলে-মেয়ের মাঝে বাঁধে বিরোধ। এদিকে সুফিয়া বেগমের নামে থাকা তিনবিঘা জমি মেয়েদের নামে লিখে দিয়েছেন। এরপর ছেলেরা আর মায়ের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে চায় না। তাইতো সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মার স্থান হলো খোঁলা আকাশের নিচে। বৃহস্পতিবার (৩ এপিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে জগৎনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সন্ধার পর বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে এক নজর দেখতে গ্রামবাসীরা ভিড় করে। সংবাদ পেয়ে জগৎনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম খোলা আকাশের নিচে একটি বালিশের নিচে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন। কথা বলার চেষ্টা করলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন। কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারে না। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের কষ্ট দেখে রাতে মুশার হাত রক্ষার জন্য গ্রামবাসী মশারি টাঙিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার কয়েল জালিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের লোকজনের কেউ একনজর দেখতেও আসেনি। তবে ঘটনার এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে মশিউর নামের এক ছেলে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে খোলা মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে জায়গা দেন।

গ্রামবাসীরা বলেন, সুফিয়া বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার পরর ৪০ বিঘা জমি ছেলেরা দখলে রেখেছে। এছাড়া কিছু জমি ছেলেরা আগেই তার বাবার কাছ থেকে লিখে নিয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম তার নামে থাকা তিন বিঘা জমি পাঁচ মেয়েদেরকে লিখে দেন। এরপর ছেলেরা তার মাকে দেখতে পারে না। পরবর্তীতে একইগ্রামের ছোট মেয়ে আঙ্গুর বেগম ও জামাই ফিরোজ হোসেনের বাড়িতে জায়গা হয় তার। কিন্তু কতোদিন? এই ক্ষোভ থেকে মেয়ে রেখে যায় খোলা আকাশের নিচে। জামাই ফিরোজ হোসেন বলেন, শাশুড়ি আমার কাছেই ছিল। কোনো ছেলেরা তার খোঁজখবর নেয় না। অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পরও ছেলেরা মাকে দেখতে আসেনি। তাই রাগ করে স্ত্রী আঙ্গুর বেগম আমার শাশুড়িকে ফাঁকা মাঠে রেখে আসে। মথুরাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লিটন ও বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক নিহার চন্দ্র বলেন, ঘটনা জানার পর এখানে এসেছি। তার ছেলেদের সাথে কথা বলেছি, তার ছেলে মশিউরের কাছে আছে বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম। মায়ের ভরণ পোষণের দায়িত্ব না নিলে ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে ভরণ পোষণ আইনে মামলা করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত