ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শরীয়তপুর পার্কে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল

শরীয়তপুর পার্কে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল

গত বছর ঈদুল ফিতরে সীমিত পরিসরে চালু করা হয় শরীয়তপুর পার্ক। চালু হওয়ার এক বছরের মাথায় জেলা সদরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রটিতে এখন শিশু-কিশোরসহ সকল বয়সের মানুষের উপচে পড়া ভিড়। জেলা সদরে আর কোন বিনোদনের জায়গা না থাকায় এটি এখন যে কোন উৎসব পার্বণেই বর্ণিল হয়ে ওঠে। বিনোদনপ্রেমীদের কথা মাথায় রেখে জেলা প্রশাসনও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও আকর্ষণীয় করতে সংযোজন করছে নতুন নতুন রাইড। শিশু-কিশোরদের বাঁধভাঙা আনন্দ উল্লাসের চিত্রই সাক্ষী দেয় পার্কের সফলতার। তবে আগামীর কথা চিন্তা করে ছায়া সুনিবিড় ও মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের কার্যকরি উদ্যোগ এবং বিনোদনপ্রেমীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ বিশিষ্টজনদের। পার্কটির বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে স্বচ্ছলদের পাশাপাশি অস্বচ্ছল শিশুদের জন্যও বিনে পয়সায় বিনোদনের সুযোগ রেখেছে জেলা প্রশাসন।

১৯৮৩ সালে ৬৪ নম্বর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে শরীয়তপুর জেলার। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে পিছিয়ে থাকা পশ্চাদপদ জেলা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিবন্ধকতার বেড়াজালে কাংখিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। তার পরেও গুটি গুটি পায়ে চলছে এগিয়ে চলা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হয় জেলা সদরের শিল্পকলা সংলগ্ন এলাকায় একটি বিনোদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার। এরই অংশ হিসেবে একই বছর ঈদুল ফিতরের দিন সীমিত পরিসরে চালু করা হয় শরীয়তপুর পার্কটি। শুরুর পর থেকেই এখানে প্রত্যাশার বেড়াজাল ছিড়ে বাড়তে থাকে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল। ধীরে ধীরে শক্তি ও সামর্থের সবটুকু ঢেলে দিয়ে পার্কে সংযোজন করা হয়েছে বিনোদনের বিশেষ করে শিশুদের জন্য নতুন নতুন রাইড। এখনো পরিকল্পনার সবটুকু বাস্তবায়ন করা না গেলেও শিশু-কিশোর ও সর্বসাধারণের আনন্দমুখর বিচরণ দেখলেই মন ভরে যায়। কিছু না থাকার মাঝেও খাখা করা একটি বাগানের মাঝখানে একটি দৃষিনন্দন গোলাপ যেমন সকলের দৃষ্টি কাড়ে এটিও তারই প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন বিশিষ্টজনরা। পার্কে ঘুরতে আসা কিশোরী হোমায়রা ছাবা তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলে, এখানে আসলে মনটা ভরে যায়। গত বছর ঈদের পরের দিন এখানে এসেছিলাম এবারও আসলাম। ছোট ছোট বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে যে এত ভালো লাগে, এখানে না আসলে এটা বুঝতেই পারতাম না। কীভাবে যে দুই-তিন ঘণ্টা কেটে যায় মনেই থাকে না।

আরেক শিশু খালিদ হাসান জানায়, আমার যে কত্তো ভালো লাগছে বোঝানো যাবে না। এইটা না হলে আমরা কোথায় যাই তাম? দূরে কোথাও যাওয়ার টাকা আমার পরিবারের নেই। এটা যারা করেছে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

শরীয়তপুরের কৃতি সন্তান ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সাফফাত হোমায়রা বলেন, আমাদের ছোট বেলায় ঈদ পার্বণ ও বৈশাখসহ নানা উৎসবে জেলা সদরে বিনোদনের কোনো সুযোগ ছিল না। সামথ্যবানরা দূরের বিনোদনকেন্দ্রে যেতে পারলেও পিছিয়ে থাকারা বঞ্চিত হতো। গত বছর শরীয়তপুর পার্কটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন সামর্থ্যবানদের পাশাপাশি কম স্বচ্ছলরাও খুব সহজেই এখানে বিনোদন করতে পারছেন। আর অস্বচ্ছলরাও টাকা ছাড়াই সুযোগ পাচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ। তবে এটিকে আরও প্রাণবন্ত করতে আমাদের সকলকে সহযোগী মনোভাবাসম্পন্ন ও উদ্যোগী হতে হবে। তবেই এটি কাঙ্ক্ষিত সফলতা লাভ করবে।

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ শরীয়তপুর শাখার সভাপতি মোদাচ্ছের হোসেন বাবুল বলেন, পার্কটি স্থাপন বিশেষ করে শরীয়তপুর সদরের শিশু-কিশোরদের জন্য একটি অনন্য নজির। দুই বছর আগেও জেলা সদরে বিনোদনের কোন সুযোগ ছিল না। এটি শুধু বিনোদনের সুযোগই তৈরি করেনি শিশু-কিশোরদের মোবাইল আশক্তি থেকেও দূরে রাখতে ভুমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। তবে আগামীর বৈশি^ক জলবায়ুর চ্যালেঞ্চ মোকাবেলার কথা মাথায় রেখে মাঠে ঘাস এবং উপযুক্ত জায়গায় সবুজায়নের মাধ্যমে ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ নিশ্চিত করতেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই এটি আগামীতে হয়ে উঠবে নির্মল বিনোদনকেন্দ্র।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, জেলা সদরে আর কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় শরীয়তপুর পার্কটিই এখন বিশেষ করে শিশুদের অন্যতম ভরসাস্থল। জেলা প্রশাসক স্যারদের নির্দেশনা, পরমর্শ এবং সার্বিক সহযোগিতায় আমরাও আমাদের সাধ্যর সবটুকু ঢেলে দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।

বিনোদনপ্রেমীদের প্রত্যাশা অনেক থাকলেও আমাদের সামর্থ্যরে মধ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পার্কটিকে আরও ছায়া সুনিবিড়, প্রাণবন্ত ও আনন্দমুখর করতে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। পার্কে অস্বচ্ছল শিশুদের বিনোদনের সুযোগের কথা মাথায় রেখে বিশেষ বিশেষ দিনে টাকা ছাড়াই বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত