ঢাকা শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাঙ্গাইলে সরকারি দপ্তর সামলাচ্ছেন ৭০ নারী

টাঙ্গাইলে সরকারি দপ্তর সামলাচ্ছেন ৭০ নারী

টাঙ্গাইলে সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলাচ্ছেন ৭০ নারী- তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, শিক্ষা অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিস, ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে ৭০ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। সরকার পরিবর্তনের পর এসব কর্তকর্তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ডিসিসহ সাতজন নারী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- জেলা প্রশাসক শরীফা হক, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এলএ ও এসএ শাখা) ফারজানা আক্তার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (রেকর্ডরুম, প্রবাসী কল্যাণ শাখা, জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা এবং ফরমস অ্যান্ড স্টেশনারি শাখা) প্রীতিলতা বর্মণ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (লাইব্রেরি শাখা- শিক্ষানবিশ) জান্নাতুল নাঈম বিনতে আজিজ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমীন সুলতানা, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমনা আকতার এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এসএ শাখা) রিতা সুলতানা। জেলার ১২ উপজেলায় তিনজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- টাঙ্গাইল সদরে নাহিদা আক্তার, ভূঞাপুরে মোছা. পপি খাতুন এবং বাসাইলে আকলিমা বেগম। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনজন নারী। তারা হচ্ছেন- ঘাটাইলে সাবরিন আক্তার, মধুপুরে রিফাত আনজুম পিয়া এবং সখীপুরে নাজমুস সামা।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পদে ১০ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- দেলদুয়ার উপজেলায় দেওয়ান খায়রুন নাহার, নাগরপুরে শাহীন রুবা আক্তার, মির্জাপুরে শারমিন সিদ্দিকা, গোপালপুরে মাহমুদা খাতুন, মধুপুরে শারমিন সুলতানা সুমি, ঘাটাইলে তাপসী শীল, ভূঞাপুরে আমেনা বেগম, কালিহাতীতে শিল্পী দে, সখীপুর উপজেলায় ফিরোজা আক্তার এবং বাসাইলে কনিকা মল্লিক।

জেলার শিক্ষা বিভাগেও রয়েছেন সাতজন নারী। তারা হচ্ছেন- জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা, শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিদর্শক বীথি খান, মির্জাপুর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহনাজ পারভীন, ভূঞাপুরে উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার তাহমিনা আক্তার, গোপালপুরে উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার কামরুন নাহার, দেলদুয়ারে উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার মোসাম্মৎ খাদিজা এবং কালিহাতীতে উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার জুলিয়া আক্তার। জেলা তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন তাসলিমা জান্নাত। স্বাস্থ্য বিভাগের বাসাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে রয়েছেন শার্লী হামিদ। প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ছয়জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) রাজিয়া সুলতানা, ইন্সট্রাক্টর (কৃষি) নূসরাত শারমিন, ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) কনিকা আক্তার, পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শারমিন ইসলাম, পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লিজা মনি এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোহরাত মাশরুর। পুলিশ প্রশাসনে মধুপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফৌজিয়া হাবিব খান।

কৃষি বিভাগে উপজেলা কৃষি অফিসার পদ সামলাচ্ছেন ছয়জন নারী। তারা হচ্ছেন- গোপালপুরে শামিমা আক্তার, সদর উপজেলায় রুমানা আক্তার, সখীপুরে নিয়ন্তা বর্মণ, ঘাটাইলে বিলশাদ জাহান, কালিহাতী ফারাহানা মামুন এবং মির্জাপুরে মাহমুদা খাতুন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের দুজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাকলী রায় এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাহেরা তাসমিমা। জেলার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাদিয়া হাসান। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগার কার্যালয়ে তিনজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আইরিন সুলতানা, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আর্জিনা হক এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফফাত জাহান। টাঙ্গাইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইন্সট্রাক্টর অফিসে দুজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হচ্ছেন- সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর সুলতানা এবং ইন্সট্রাক্টর লায়লা আক্তার। যুব উন্নয়ন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক পদে রয়েছেন ফাতেমা বেগম। বিসিক জেলা কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন চারজন নারী। তারা হচ্ছেন- ভারপ্রাপ্ত সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক শাহনাজ বেগম, প্রমোশন কর্মকর্তা রুমানা রশিদ, ভারপ্রাপ্ত জরিপ ও তথ্য কর্মকর্তা আছমা আকতার এবং কারিগরি কর্মকর্তা আন্তিয়ারা খাতুন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন তিন নারী। তারা হচ্ছেন- মির্জাপুরে শাহনাজ আক্তার, দেলদুয়ারে নাজমা সুলতানা এবং মধুপুরে ফারহানা শিরিন। এছাড়া দেলদুয়ারে সহকারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাব্রিনা মমতাজ এবং নাগরপুরে সহকারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার সাব্রিনা সুলতানা দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা সঞ্চয় অফিসের সহকারী পরিচালক ফারহানা পারভীন, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে থেরিওজেনোলজিস্ট ডা. সূচনা সরকার, জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল শাহীন, সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফারজানা খান, বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) অফিসের টাঙ্গাইল সদর ইউনিটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসমা আক্তার, সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) উপ-তত্ত্বাবধায়ক তানিয়া আক্তার এবং পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক পদে জেবুন্নাহার পারভীন দায়িত্ব পালন করছেন।বিভিন্ন উপজেলায় নানা পদে কর্মরত নারী কর্মকর্তারা জানান, তারা মাঠ প্রশাসনের কাজের সমন্বয় ও তদারকি, জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। নিজ নিজ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দেখভালও তাদের করতে হয়। তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি এবং বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরকারের স্থায়ী আশ্রয়ণ, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অসহায় ও দুস্থ মানুষের সহায়তায় কাজ করেন। একইসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন তারা। বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত নারী মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তারা জানান, একদিকে সংসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়, অন্যদিকে সঠিকভাবে যথাসময়ে অফিসের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং শিশু ও নারী পাচার সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কাজ করতে হয়।

চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা জানান, বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অনেক অবদান রয়েছে। তারা পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুয়ায়ী সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে কাজ করছেন। পুরুষ সহকর্মীরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন। ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. পপি খাতুন জানান, তারা সরকারের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কাজগুলো অনেক চ্যালেঞ্জের। সব কিছু মোকাবিলা করেই তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরো জানান, নারী হিসেবে কাজ করতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা তিনি দেখতে পাননি।

সহকর্মীরা তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। অনেক সময় দিনের পাশাপাশি রাতেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থাশীল। গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া হাবিব খান জানান, নারী সদস্য হিসেবে তাদের কাজের ধরণ আলাদা। প্রতিবন্ধকতা নিয়েই তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। বিশেষ করে তার দায়িত্বরত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাকে সার্বক্ষণিক কাজ করতে হচ্ছে। তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে পছন্দ করেন বলে জানান। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্যাহ আল মামুন জানান, নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন। এ জেলার জেলা প্রশাসকও একজন নারী। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও, অ্যাসিল্যান্ডসহ অনেক নারীই সরকারি দপ্তরের কাজ করছেন। তারা যথাযথ দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে জনসেবামূলক কাজে স্ব-স্ব ভূমিকা রাখছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত