বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দেখতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ জমিদার বাড়ির পর্যটকদের ঘিরে তৈরি হয়েছিল শতাধিক ভাসমান বিভিন্ন দোকান। টানা লম্বা ছুটিতে দেখতে আগ্রহী দেশি বিদেশি নানা স্থান থেকে পযটকরা ছুটে এসেছেন প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ এই জমিদার বাড়িতে। বিগত বছরগুলোতে ঈদের দিন বন্ধ থাকলেও এবার ঈদুল ফিতর দিন সোমবার ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বালিয়াটি জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন ১৬ হাজারেরও বেশি পযটক, যা এই ঐতিহাসিক স্থানটির জন্য এক নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৬ দিন ধরে চলা এই ঈদের ছুটিতে জমিদার বাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এর ফলে এখানে শুধু টিকিটি বিক্রি করে রাজস্ব আাদয় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।
বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। শনিবার দুপুর ১টার দিকে গিয়ে দেখা যায় ছুটির শেষ দিনেও বেশ ভিড়। মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। ধামরাই উপজেলার জালসা গ্রাম থেকে ঘুরতে আসা সাজিদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি আজকেই শেষ, তাই শনিবার পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে জমিদার বাড়িতে ঘুরতে এসেছি। ৩০ টাকা করে ৪টি টিকিট কিনেছি। আর ৪ ও ৬ বছরের দুই শিশুর টিকিট লাগেনি। এই ৬ সদস্য নিয়ে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলে পরিবেশ ভেদে ৫-৮ হাজার টাকা শুধু টিকিট বাবদ লাগত। সেখানে আমরা বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে ১২০ টাকার টিকিট কেটে ঈদের আনন্দ উপভোগ করলাম। মির্জাপুর উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, আমি ধামরাই উপজেলায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। রবিবার বাড়ি থেকে গিয়ে অফিস করব। তাই ছুটির শেষ দিন এসে বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে বেড়াতে আসলাম। ঢাকার আমিন বাজারের বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, ঢাকায় বাইরে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে জন প্রতি ১০০ টাকা খরচ করে বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি বন্ধদের নিয়ে। ৩০ টাকায় দিনভর ঘুরলাম এ নান্দনিক জমিদার বাড়িতে। জমিদার বাড়ির সামনের হোটেলে গ্রামীণ পরিবেশে অল্প টাকা দুপুরের খাবারও খেলাম।
জমিদার বাড়ির ভেতরে স্থান করে দেখা যায়। টিকিট কেটেই প্রথমে চলে যাচ্ছে অন্দর মহলে। জমিদার বাড়ির ৪টি ভবনের বা থেকে ২য় টির ২য় তলায় অবস্থিত ৪টি রুমে জমিদার বাড়ির বিভিন্ন আসবাব পত্র সাজানো। কথিত আছে বড় রুমের ভিতরে জমিদাররা নৃত্য দেখত আর আনন্দ উপভোগ করত। ৪টি ভবরের বারান্দায় প্রবেশ করে কেউ সেলফি তুলছেন। পিছনে রয়েছে ৭ ঘাটলা বিশিষ্ট পুকর। ৪টি বড় ভবন ছাড়াও পেছনে রয়েছে আরও ৩টি বড় অট্রালিকা। সবগুলি আবার সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সামনের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে রয়েছে ৪টি সিংহ দ্বার। যার পেছনে ফেলে ছবি তুলতে বেশি ব্যাস্ততা প্রর্যটকদের। আবার ছবি তুলতে তুলতে কাচা ঘাষের উপর বসে সময় পার করছেন অনেকেই। জমিদার বাড়ির সামনে বিভিন্ন রকমের রকমারি জিনিসের শতাধিক দোকান বসেছে। বসানো হয়েছে নাগরদোলা ও শিশুদেরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ষ্টল। ফুচকা, চটপটি ও গরমের জন্য লোকাল ডাব, সরবতের বিভিন্ন দোকান। আর বিভিন্ন কোমল পানীয়, আইসক্রিম এর স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান।
এ সব অস্থায়ী দোকানে ঈদের ছুটিতে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বেচা কেনা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রালয়ের প্রত্নতত্ত¦ অধিদপ্তরের বালিয়াটি প্রাসাদ জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান নিয়াজ মাখদুম বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবার আগমনে আমরা খুবই আনন্দিত। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দর্শনার্থীরা এখানে এসে আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে। এতে যেমন পর্যটন খাতের উন্নতি হচ্ছে, তেমনি স্থানীয় ব্যবসা এবং কর্মসংস্থানে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ মৌসুমে ঈদের দিন থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার টিকিট বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে। সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, যেখানে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে, অন্যদিকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উন্নত পরিষেবা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। চলতি মৌসুমেও জমিদার বাড়ির সংস্কার কাজ চলছে। জমিদার বাড়ি পরিদর্শনের জন্য আরও উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হয় এবং এই ঐতিহাসিক স্থানটির সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া, পর্যটকদের আগমন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।