ঢাকা শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি এক হাজার

ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি এক হাজার

শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে দুই শতাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। জাজিরা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সঞ্চয় কুমার দাসের দায়ের করা মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারীকে প্রধান আসামি করে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও এক হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। প্রধান আসামি কুদ্দুস বেপারীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুরে প্রায় ২০ বছর থেকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। বিশেষ করে দুই ঈদে যখন সব লোক এলাকায় অবস্থান করে তখনই সংঘর্ষের দামামা বাজতে শুরু করে। এছাড়াও এই দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা নিত্য দিনের। এরই ধারাবাহিকতায় এলাকায় তৈরি করতে শুরু করে ককটেল-হাতবোমা। এলাকার মহিলারাও এই কাজে সমান অংশীদার হয়। যখন সংঘর্ষ শুরু হয় তখন মহিলারা পেছন থেকে উপকরণ সরবরাহ করতে থাকে। যা হয়তো দেশব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনার তুলনায় বিরল। এই এলাকার ধারাবাহিক সংঘর্ষের বলি শুধু বিবাদকারীরাই না এলাকর অনেক সাধারণ মানুষ চিরতরে হারিয়েছেন পরিবারের উপার্জনকারীকে। কেউ কেউ হারিয়েছেন হাত-পা এবং বরণ করেছেন সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব। এলাকাবাসী এখন এই বর্বর সংঘর্ষের ঘটনা থেকে মুক্তি চায়, শান্তি চায়। তাদের দাবি চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা যাতে আবার আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে।

বিলাসপুর ইউনিয়নের জানখারকান্দি গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মেহেদী হাসান খান বলেন, আমরা দীর্ঘ পনের বছর যাবত এলাকায় দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ দেখে আসছি। সন্ত্রাসীরা নিজেদের আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে যে ভাবে ধারাবাহিকভাবে এলাকায় ককটেল, টেটা, ঢাল-সরকিসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে গোলযোগ সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্ট করে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এক পক্ষ অন্য পক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটতরাজের যে তান্ডবলীলা চালায় তা মানুষ হিসেবে আমাদেরকে লজ্জা দেয়। আমরা চাই চিহ্নিত এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে ও সন্ত্রাসীদের চিরতরে নিবৃত্ত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আমরা পরিবর্তিত এই সময়ে আগের সন্ত্রাসী বর্বরতার দৃশ্য আর দেখতে চাই না।

জাজিরা থানার ওসি মুহাম্মদ দুলাল আখন্দ বলেন, বিলাসপুরে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় উপ-পুলিশ পরিদর্শক সঞ্চয় কুমার দাসের দায়ের করা মামলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়ও ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও এক হাজার অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। আমরা এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্য থেকে ৭ জনকে আটক করেছি। বাকি আসামিদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সারাসি অভিযান পরিচালনা করছি।

র‌্যাব-৮ মাদারীপুরের কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন (এসপি) বলেন, র‌্যাব-৮ ও র‌্যাব-৩ (ঢাকা) এর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে বিলাসুপুর সংঘর্ষের মামলার প্রধান আসামি আব্দুল কুদ্দুস বেপারীকে ঢাকার শাহজাহানপুর মুমিন বাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আমরা পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া শেষে শরীয়তপুর পুলিশের কাছে পরবর্তী আইনী কার্যক্রমের জন্য হস্তান্তর করা হবে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গতকালের সংঘর্ষের পর থেকেই আমরা স্থানীয়ভাবে ককটেল তৈরির উৎস এবং হোতাদের সন্ধানে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। এবং ককটেল তৈরির সরঞ্জামের উৎসের সন্ধানে নেমেছি। এখন থেকে যাতে এই ককটেল বা দেশীয় অস্ত্র তৈরি, সংগ্রহ, মজুত ও ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশের সক্ষমতার শতভাগ ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করছি। যাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটতরাজের যে প্রক্রিয়া ছিল তা সমূলে উৎখাত করব। এ বিষয়ে কোনো ধরনের অনুকম্পা তারা পাবে না। পুলিশ ওই এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। এরই মধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে আইনের আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত