ফেনীর তিন দিকে নদীবেষ্টিত সোনাগাজী উপজেলার মানচিত্র দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও মসজিদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্ক ও বসতভিটা হারানোর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারেন না নদীর তীরের বাসিন্দা সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অনেকেই। সরজমিনে দেখা যায়, সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটাখিলা, কালি মন্দির, চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীরহাট স্লুইজ গেট, আউরারখীল জেলেপাড়াসহ আলামপুর, তেল্লারঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনীপাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপৃর, আউরারখিল, আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সোনাপুর, বাদামতলী, গুচ্ছগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আসছে বর্ষার পূর্বেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, জোয়ারের ফলে ছোট ফেনী নদীর তীরবর্তী এলাকার মুছাপুর, চরহাজারী, চরপার্বতী ও সোনাগাজীর নিচু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়। এতে করে ছোট ফেনী নদীর দু’পাশে তীব্রভাঙন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে মুছাপুর রেগুলেটরের ২৩টি স্লুইস গেট দিয়ে ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরে চলে যেতো। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসে ভারতীয় উজানের পানির ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গত সোমবার সকালে এ রেগুলেটরটি ভেঙে যায়। একই সঙ্গে সেখানে নির্মিত ব্রিজটিও পানিতে তলিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদীর বাঁক ধীরে ধীরে বেড়িবাঁধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে অনেক বাড়িঘর চোখের সামনে নদীতে চলে গেছে। বিগত বন্যা পরবর্তী এ ভাঙন আরও বেড়ে গেছে। তারা জানান, বসতভিটা হারানোর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। মনে হয়, এই বুঝি সব ভেঙে নিয়ে গেল। স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মানুষের ঘরবাড়ি, দোকান-পাট, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরেই ভাঙনের হুমকিতে রয়েছেন। নদী তীরবর্তী লোকদের আহাজারি দেখার কেউ নেই। প্রতি দিন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। মুসাপুর রেগুলেটর প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সড়ক, মানুষের ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করতে হবে।
উত্তর চরসাহাভিকারী এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বলেন, জোয়ার আর প্রবল স্রোতের সঙ্গে ভাঙনের আকার বাড়তে থাকে। এতে তার দুটি বসত ঘরের মধ্যে একটি তড়িগড়ি করে সরিয়ে ফেলতে পেরেছেন। আর সামান্য অংশ ভাঙলেই পুরো ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে যাবে।
চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন খোকন বলেন, ভারতীয় বন্যার পানির চাপে গত বছরের আগস্টে রেগুলেটরটি নদীগর্ভে চলে যায়। এর ফলে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সোনাগাজী উপজেলা জামায়াতের আমীর মো. মোস্তফা বলেন, দেশের মানচিত্রে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুছাপুর রেগুলেটরটি দ্রুত পুনর্নির্মাণ করতে হবে। বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান জানান, গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বাঁকা নদী সোজা করণ ও স্থানীয়দের বসত বাড়িঘর, কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত দাবি জানানো হয়েছে।
সোনাগাজীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর দুই উপজেলার বাসিন্দারাই নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন। বিষয়টি প্রথম থেকেই আমাদের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এর যে ব্যাপকতা সেটি উল্লেখ করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে স্থায়ী সাধানের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পাউবোসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার অবগত করা হয়েছে।