ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আ.লীগ নেতাদের ভয়ে আট বছর ঘরছাড়া

আ.লীগ নেতাদের ভয়ে আট বছর ঘরছাড়া

জমির কাগজ নিয়ে শালিসে ডেকে হাত-পা বেঁধে প্রথমে বেধরক পিটুনী ও পরে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার চেষ্টা। অনেক অনুনয় করে প্রাণে বাঁচলেও ঘর ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে। এ নির্দেশের ব্যত্যয় হলে এবার আর ক্ষমা নাই বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় নূর মোহাম্মদকে (৭২)। এ ঘটনার পর দীর্ঘ ৮ বছর বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। ৫ আগস্টের পর বাড়ি ফিরে নূর মোহাম্মদ যা বললেন, তাতে গা শিউড়ে উঠবে সবার। বৃদ্ধ নূর মোহাম্মাদের বাড়ি রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বাতারগ্রাম এলাকায়। তার পিতার নাম মৃত আকবার আলী। নূর মোহাম্মদ জানান, আমার বাবা আকবার আলী ও ভবানী শীল দুইজন বন্ধু ছিলেন। দুইজনই নরসুন্দরের কাজ করতেন। দেশ বিভাগের পর বভানী শীল ভারতে চলে যান। যাওয়ার আগে ৬টি ঘরসহ ১০১ শতক জমি বাবার নামে লিখে দেন। সে সময় গরু-ছাগল ও কিছু আসবাবপত্র বিক্রি করে আমার বাবা তাকে কিছু টাকাও দিয়েছিল। সেখানে শর্ত ছিল যে, তিনি ফিরে এলে এ জমি তাকে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু অদ্যবধি তিনি আর ফিরে আসেননি। এদিকে এই জমির ওপর নজর পড়ে আকতার অলি, আনোয়ার গংদের। তারা রহমত উল্লাহ নামের তাদের এক ভাইকে পিতা বানিয়ে ৬২ সালের রেকর্ড করিয়ে জোরপূর্বক জমি দখলে নেন। আমার পিতার মৃত্যুর পর আমি মামলা করি। অনেক গ্রাম্য সালিশও হয়। ফলে কোনোভাবেই তারা কুলিয়ে উঠতে না পেরে অবশেষে আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মোসলেম মেম্বার আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি হন। এক সন্ধ্যায় সালিশের কথা বলে মশিউর মেম্বার, শফিয়ার, ছোটন, তৈয়ব আলী মেম্বার, সোনাবুদ্দি, সোনাহার, বাবলু, বাচ্চু, সহিদার বাতারগ্রামের হাকিম উদ্দিনের বাড়িতে আমাকে ডেকে নেয়। আমি উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ধরে হাত-পা বেঁধে বেধরক মারপিট করে কাগজপত্র ছিনিয়ে নেয়। আমার তখন জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পাই আমাকে বস্তায় ভরানো হচ্ছে আর বলাবলি করছে আমাকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। আমি তখন অনেক আকুতি-মিনতি করলাম। তখন তারা একটি খোলা জায়গায় আমাকে ফেলে দিয়ে আসে। সেখানে কতক্ষণ ছিলাম জানি না পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালে ১৩ দিন চিকিৎসার পর বাড়িতে আসলে তারা আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। বাড়ি না ছাড়লে কোনো ক্ষমা নেই। আমি থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি বলেন, এখানে মামলা হবে না। এ খবর পেয়ে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আবার আমার বাড়িতে হামলা করে। উপায় না পেয়ে আমি রাতেই পালিয়ে যাই। রাজশাহী, নাটোর, সান্তাহার, পার্বতীপুর এলাকায় রিকশা চালিয়ে, দিনমজুরি করে এবং বোতল কুড়িয়ে দিন কাটিয়েছি। দীর্ঘ ৮ বছর বাড়িতে আসতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর বাড়ি এসে দেখি তারাই এখন এলাকা ছাড়া। মামলাগুলো আবার চালু করেছি। আশা করছি রায় আমার পক্ষেই হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত