পাবনার ঈশ্বরদীতে সাদা সোনা নামে খ্যাত রসুন জমি থেকে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার চাষিরা। বাজারে নতুন রসুনে সয়লাব। কিন্তু বাজারে প্রত্যাশিত চাহিদা ও দাম না থাকায় উৎপাদিত রসুন নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।
ফলন ভালো হলেও বর্তমান বাজার দরে উৎপাদন খরচই উঠছে না বলে দাবি চাষিদের। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত তিন চার বছর ধরে রসুনের বাজার দর বেশি ও আবাদ লাভজনক হওয়ায় রসুন আবাদে ঝুঁকছেন ঈশ্বরদীর চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের চাইতে এ বছর বিঘা প্রতি খরচ বেড়েছে আট থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি। রসুন চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় রসুনের স্থানীয় উৎপাদনকারী চাষিদের প্রতি বিঘায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
চাষিরা জানান, কয়েক বছর ধরে রসুনের উৎপাদন খরচ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক এবং শ্রমিক খরচ মিলে এবার একবিঘা জমিতে রসুন চাষ করতে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর রসুন বিক্রি করে পাচ্ছিন বিঘায় ৫৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, এবার জমিতে রসুন লাগানোর সময় বীজ রসুন প্রতিমণ ১০ হাজার ৮০০ টাকা দরে আড়াই মণ বীজ এক বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলাম। শুধু বীজ বাবদ ২৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে রসুন লাগাতে শ্রমিকের মজুরি বাবদ লাগছে ১২ হাজার টাকা। সঙ্গে একাধিক বার সার, কীটনাশক, সেচ, জমি থেকে রসুন উঠাতে শ্রমিকসহ বিঘায় খরচ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ২৫ মণ রসুন উৎপাদন হয়েছে। বাজারে কোয়ালিটি ভেদে প্রতিমণ রসুন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ২২০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে। সে হিসাবে প্রতি বিঘায় রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা।
রসুন আবাদে চাষিরা লাভের মুখ দেখা তো দূরের কথা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেনি। বিঘা প্রতি ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
উপজেলার সরোইকান্দি এলাকার কৃষক শাওন মন্ডল বলেন, আমাদের রসুন উত্তোলনের পর সার-কীটনাশকের দোকানে বকেয়া দেনা পরিশোধ করতে হয়। আবার বিপুল পরিমাণ রসুন একসঙ্গে সংরক্ষণেরও তেমন ব্যবস্থা আমাদের নেই। সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার থাকলে আমাদের এ দুরবস্থা হতো না। রসুন বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব ভেবেছিলাম, রসুন এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। এর থেকে প্রায় দুই হাজার টন রসুন উৎপাদিত হয়েছে। অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঘরে রসুন সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করলে চাষিরা ভালো লাভ পাবেন বলে জানান কৃষি বিভাগ। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, আমন ধান কাটার পর জমি থেকে দ্রুত আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ভেজা থাকতেই পরিমিত সার প্রয়োগ করে সারিবদ্ধভাবে রসুনের বীজ কোয়া রোপণ করতে হয়। এরপর খড় দিয়ে জমি ঢেকে দিতে হয়। এক মাস পর সেচ দিয়ে জমিতে পরিমাণ মতো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে রসুন ঘরে ওঠে।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদীর অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ প্রহল্লাদ কুমার কুন্ডু বলেন, ঈশ্বরদীর মাটি রসুন চাষের উপযোগী। এখন পুরো দমে রসুন উত্তোলন করা হচ্ছে জন্য বাজারে রসুনের সরবরাহ বেড়ে যাওয়াই দাম কমে গেছে। অথচ একমাস আগেও রসুনের কেজি ছিল ২০০ টাকা। মৌসুম শেষে রসুনের দাম বাড়বে। তাড়াহুড়ো করে রসুন বিক্রি না করে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চাষিদের এমনভাবে রসুন উৎপাদন করতে হবে, যাতে সিজানের একমাস আগে রসুন বাজারে আনতে পারলে তারা ভালো মূল্য পাবেন।