নওগাঁ সদর উপজেলার নলগাড়া ফসলের মাঠে পানি নিষ্কাশনের খালের মুখ বন্ধ করে খাসজমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে কতিপয় প্রভাবশালী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫টি এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। সেই সাথে অজ্ঞাতনামাদের নামে থানায় মামলা করা হয়েছে। অবৈধভাবে খননকৃত পুকুরের কারণে ইরিবোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্থের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। অবৈধভাবে খননকৃত পুকুরপাড় ভেঙে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করাসহ খাসজমি উদ্ধারের দাবি জানান কৃষকরা। এ মাঠে পানি নিষ্কাশনের সমস্যা দেখা দিলে জলাবদ্ধতার কারণে আগামীতে কয়েকশ বিঘা জমির ফসল উৎপাদন ব্যহৃত হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষক।
নলগাড়া মাঠে প্রায় দেড় হাজার বিঘা ফসলি জমি আছে। যার অধিকাংশ এক ফসলি। এসব জমিতে ইরি-বোরো আধাপাকা ধান দোল খাচ্ছে। আর কিছুদিনের মধ্যে ঘরে উঠবে এসব ধান। যা থেকে কৃষকদের সারা বছর ভরণপোষণ হয়ে থাকে। মাঠের চারদিকে সোনালী ফসল। আর মাঝে মাঠের নিচু জায়গায় রয়েছে প্রায় ৬০ বিঘা খাসজমি। বর্ষায় খাসজমিতে বক্তারপুর, চকপাথুরিয়া, বাচারিগ্রাম, দিঘা, পাহাড়পুর ও বরুনকান্দিসহ অন্তত ২০ গ্রামের পানি এ খাল দিয়ে নেমে যায়। নিচু ওই জলাশয়ে সারাবছরই পানি জমে থাকে। এতে যে কোনো সময় বৃষ্টি হলে বোরো ফসল ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। ওই জলাশয়ে স্থানীয় কিছু মৎস্যজীবীরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
সম্প্রতি ঈদ-উল ফিতরের দীর্ঘ ছুটি থাকায় প্রভাবশালীরা ফসলের মাঠে পানি নিষ্কাশনের খালের মুখ বন্ধ করে খাসজমিতে ৮টি এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে দিন-রাত কাজ করে ১০টি পুকুর খনন করার কার্যক্রম শুরু করে। এরমধ্যে ৬টি সম্পূর্ণভাবে খনন কাজ শেষ হয়। আর বাঁকিগুলোর কাজ শুরু হয়। অবৈধভাবে পুকুরের পাড় প্রায় ১০ ফুট উঁচু করে খনন করায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। যে কোনো মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তলিয়ে যাবে ফসল। এতে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষক। দ্রুত পুকুর পাড় ভেঙে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করাসহ খাসজমি উদ্ধারের দাবি জানান কৃষকরা।
খাসজমি দখল করে অবৈধভাবে পুকুর খননের বিষয়টি জানার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল ঘটনাস্থলে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। সংবাদ পেয়ে আগেই এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) রেখে পালিয়ে যান দখলদার ও চালকরা। এ সময় ৫টি এক্সকাভেটর মেশিন জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় পরদিন সোমবার স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন ইউএনও। একই সঙ্গে কৃষকদের পুকুরপাড় কেটে পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি। ইউএনও’র নির্দেশে হাঁপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের নামে থানায় মামলা করেন।
বাচারিগ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন- নলগাড়া মাঠে ৮ বিঘা ফসলি জমি আছে। এ মাঠ থেকে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হয় না। সামান্য বৃষ্টিতে ফসলের সমস্যা হতো। মাঠের নিচু অংশে খাসজমি আছে যেখানে মাঠের পানি জমে থাকে। এখন খালের মুখ বন্ধ করে পুকুর খনন করায় আমাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি হলে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পুকুরের পাড় ভেঙে সমান করার দাবি জানান তিনি।
আরেক কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন- দীর্ঘদিন খাল সংস্কার না করায় পলিপড়ে ভরাট যায়। এ মাঠ থেকে ঠিকমতো পানি বেরিয়ে যেতে পারে না। খালটি সংস্কার হলে এ মাঠে দুই ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব। খাল সংস্কার করা হলে কৃষকদের জন্য সুবিধা হবে। নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইবনুল আবেদীন বলেন, খালের পানির প্রবাহের মুখ বন্ধ করে খাসজমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে কাউকে না পেয়ে ৫টি এক্সকাভেটর মেশিন জব্দ করা হয় এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন- অভিযানের সময় জানা যায় খাসজমি কিছু ব্যক্তিকে পর্তন দেয়া হয়েছিল। সেখানে চাষাবাদ হওয়ার কথা। পর্তন দেয়া হলেও শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তারা আবার তৃতীয় ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে এবং পুকুর খনন করা হয়। পানি নিষ্কাশনের খালের মুখ বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করে। নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম বলেন, ঘটনায় অজ্ঞাতদের নামে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় এক্সকাভেটর মেশিনের মালিক, পুকুর খননকারীসহ যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।