লালমনিরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির (ভারপ্রাপ্ত) ইয়াছির আরাফাতের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে বিচার প্রার্থীর কাছে জোড় করে ঘুষ আদায় করছেন নাজির ইয়াছির আরাফাত। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গত বুধবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ভিডিও এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল বিকালে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ইয়াছির আরাফাত এক বিচার প্রার্থীর কাছে বন্ড দাখিলের নাম করে ঘুষ দাবি করেন। ভুক্তভোগী ওই ব্যাক্তি আদালত প্রাঙ্গণে পেশাগত দ্বায়িত্ব পালন করা এক সংবাদকর্মীকে বিষয়টি অবগত করেন। ওই সাংবাদিক মহসিন ইসলাম শাওন নাগরিক টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তিনি তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নিজের পরিচয় গোপন রেখে নাজিরের কাছে গেলে তখনও ঘুষ দাবি করেন। এক পর্যায়ে ওই সাংবাদিক ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন। ভিডিওটিতে দেখা যায়, নাজির ভুক্তভোগীর কাছে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। ঘুষের টাকার একটি অংশ ওই রুমে থাকা ক্যাশিয়ার গণেশ চন্দ্রকেও ভাগ দিতে হবে বলেও জানান তিনি। টাকা দেয়ার এক পর্যায়ে রশিদ চাইলে নাজির ইয়াছির আরাফাত বলেন, এসবের রশিদ হয় না।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই নাজির সাংবাদিকের ক্যামেরা দেখে তড়িঘড়ি করে ঘুষের টাকা লুকানোর চেষ্টা করেন। তবে তিনি তার ড্রয়ারে টাকা রাখতে না পাড়ায় তা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সাংবাদিক মহসিন ইসলাম শাওন বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা অটুট রাখতেই দুর্নীতিবাজের গোপন ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘুষ দাবি করা ওই নাজির সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছে জোরপূর্বক ঘুষ আদায় করেন এরকম অভিযোগ অনেক আগে থেকে ছিল। আমি আশা করবো এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, লালমনিরহাট আদালতের কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। বিচার কাজের প্রয়োজনীয় নথিপত্র আদান-প্রদান করতে কোর্টের নাজির, জিআরও, পেশকারের কাছে গেলেই টাকা দিতে হবে। আমরা এর পরিত্রাণ চাই। ঘুষের টাকা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নাজির ইয়াছির আরাফাত বলেন, আমি টাকা নেইনি। ওই ব্যক্তি এখানে টাকা রেখে গেছে। ঘুষের টাকার একটি অংশ হিসাবরক্ষক গণেশ চন্দ্র নেন এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণেশ চন্দ্র বিষয়টি অস্বীকার করেন। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা গ্রহণের আহবান সচেতন মহলের। অভিযুক্ত নাজিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহ-সভাপতি সুপেন দত্ত। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর গত বুধবার অভিযুক্ত নাজির ইয়াছির আরাফাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান লালমনিরহাট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল মালেক।