ঢাকা রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী

হাসপাতালের ধারণক্ষমতার চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি থাকেন সহস্রাধিক। চিকিৎসা নেন পার্শ্ববর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের বাসিন্দারাও।

ধারণক্ষমতার চারগুণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিই এখন রোগাক্রান্ত। চারপাশেই রূগ্নভাব দৃশ্যমান। বিশাল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও অন্যান্য স্টাফরা। রোগীদের দেওয়া যাচ্ছে না থাকার মতো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বেডের বাইরে থাকা রোগীদের মিলছে না খাবার। হাসপাতালের সর্বত্র দুর্গন্ধ। মানুষের ভিড়ে ভ্যাপসা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীর স্বজনরাও।

গতকাল শনিবার হাসপাতালটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বাইরে গলিপথেও গিজগিজ করছে রোগী। রোগী ও স্বজনদের ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। কোনো কোনো জায়গায় মাথার ওপর ঘুরছে না ফ্যান। ঘামে ভিজেই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বরিয়া গ্রাম থেকে স্বামীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন মাসুমা খাতুন। গত চার দিন ধরে হাসপাতালের নিচতলায় ৫ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। মাসুমা বলেন, আমরা চিকিৎসা পাচ্ছি, তবে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নেই। হাসপাতালের বেডে না থাকায় খাবার পাচ্ছে না রোগীরা। বাড়ি থেকে খাবার এনে খাওয়াতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পোড়াদহ থেকে হাসপাতালে এসেছেন ইলিয়াস আলী। তিনিও চারদিন থাকার পরও এখনো বেড পাননি। ইলিয়াস বলেন, সকাল রাতে চিকিৎসক দেখে যান, সেবা বলতে এটুকুই। বেশিরভাগ পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্র হাসপাতালে নষ্ট নাকি। বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে, খাবার পাচ্ছি না। এমনকি আরও কয়েক মাস থাকলেও মনে হয় বেড পাব না। এই হাসপাতালই এখন রোগী।

হাসপাতালের পরীক্ষাগার ঘুরে দেখা যায়, উন্নতমানের ডিজিটাল এক্সরে দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে তা সব রোগীর চাহিদা মেটাতে পারছে না। অনেক রোগীই দালালের খপ্পরে পড়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করাচ্ছে। হাসপাতালে রয়েছে ওষুধের অপ্রতুলতা।

শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ২৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১১০ জন। সেখানকার সেবিকারা বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসার মান বাড়ানো যেত। কিন্তু এতো রোগীর ভারে আমরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। এখানে কর্মপরিবেশ বলে কিছু নেই।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম বলেন, আমরা দিনের পর দিন বলে আসছি, এতো রোগীর ভার হাসপাতালের বহন করার ক্ষমতা নেই। তারপরও কেউ এলে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো যায় না। যতটুকু সাধ্যে কুলায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

হোসেন ইমাম বলেন, হাসপাতালে ওষুধ আসে ২৫০ শয্যার অনুপাতে। সেই ওষুধ সব রোগীকে দিতে গেলে কিছুটা সংকট হবেই। পাশে ৫০০ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে হয়তবা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে বলে তিনি দাবি করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত