ঢাকা রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্বর্গপূরী উৎসবে সম্প্রীতির মিলনমেলা

স্বর্গপূরী উৎসবে সম্প্রীতির মিলনমেলা

কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের স্বর্গপূরী উৎসব বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের অংশ গ্রহণে সম্প্রীতির সম্মিলনে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানের ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন- চট্টগ্রামের চন্দনাইশ জামিজুরি সুমনাচার বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শীলরক্ষিত মহাথেরো। মহতী অনুষ্ঠানের আশীর্বাদক ছিলেন রামু প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের মহা-পরিচালক বিজয় রক্ষিত মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন চট্টগ্রামের সুচিয়া সূখানন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ অতুলানন্দ মহাথেরো। প্রধান জ্ঞাতির ধর্মদেশনা করেন বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ, ভূবণশান্তি একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধ মুর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুণাশ্রী মহাথেরো। স্বাগত ও উদ্বোধকের ধর্মদেশনা করেন প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থেরো।

সভায় বিশেষ অতিথির ধর্মদেশনা করেন- কক্সবাজার উঃকুশল্ল্যা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্ঞানপ্রিয় মহাথেরো, দীপঙ্কর মহাথেরো, শীলপ্রিয় থেরো, ধর্মানন্দ থেরো, ধর্মপ্রিয় থেরো, নিরোদানন্দ থেরো, প্রজ্ঞাসত্য ভিক্ষু, প্রজ্ঞা বিনয় ভিক্ষু, প্রজ্ঞাপাল ভিক্ষু, প্রজ্ঞাপ্রিয় ভিক্ষু প্রমুখ ভিক্ষুসংঘ।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন রামু জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমদ প্রিন্স, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ক্যাছাই মং চাক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চকরিয়া কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞামোদিতা থেরো। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন কল্যাণ বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে আগত ভিক্ষু-সংঘ ও অতিথিদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা সমাজপতি বাবুল বড়ুয়া, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রনজিত বড়ুয়া, বিহার পরিচালনা কমিটির কার্যকরী সভাপতি তরুণ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক টিটু বড়ুয়া, বিমুক্তি বিদর্শণ ভাবনা কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সীপন বড়ুয়া।

স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদযাপন পরিষদের দিন ব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল- গতকাল শনিবার ভোরে প্রভাতফেরি সহকারে বুদ্ধ পূজা, সকালে অষ্টপরিস্কারসহ মহাসংঘদান, মহতী ধর্মসভা, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, অতিথি ভোজন, দুপুরে স্বর্গপুরী উদ্বোধন, বিকালে স্বর্গপূরী মেলা, ধর্মালোচনা সভা, সন্ধ্যায় স্বর্গপূরী উৎসর্গ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রয়াত ধর্মগুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো এবং প্রয়াত সারমিত্র মহাথরোর নির্বাণ সুখ কামনা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। স্বর্গপুরী উৎসবে উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে যুব সমাজ কীর্তনীয়া নৃত্যদল, উখিয়ারঘোনা জেতবন বিহার কীর্তনীয়া নৃত্যদল, শ্রীকুল গ্রামের বৌদ্ধ সমাজ কীর্তনীয়া নৃত্যদল, রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের কীর্তনীয়া নৃত্যদল বিভিন্ন জীবের মুখুশ পরিধান করে, রঙমেখে, শংসেজে নেচেগেয়ে বুদ্ধকীর্তন পরিবেশনের মাধ্যমে স্বর্গপুরী উৎসবের ব্যুহচক্র প্রদক্ষিণ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপিটক থেকে মঙ্গলাচরণ করেন প্রজ্ঞা উপেক্ষা মহাথেরো। ঊদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী প্রীতম বড়ুয়া অর্থ ও শিল্পী সুস্নীগ্ধা বড়ুয়া ইভা, তবলায় ছিলেন রাজীব বড়ুয়া।

প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থেরো জানান, রামুর স্বর্গপুরী উৎসবটি কালের সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে মূলত জীবদ্দশায় মানুষ যে কর্ম করে সেই কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন কুলে তার জন্মান্তর ঘটতে পারে এমন ধারণা দেয়া হয়। সংসারে মানুষ জন্মণ্ডমৃত্যুর গোলকধাঁধায় পড়ে ভবচক্রে ঘুরতে ঘুরতে কখনও স্বর্গও লাভ করতে পারে।

কিন্তু সেখান থেকেও নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে তাকে চ্যুত হতে হয়। নিজ নিজ কর্মগুণে বা কর্মদোষে মানুষ বিভিন্ন কুলে জন্ম গ্রহণ করছে এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকেই বিগত ৩৮ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো উক্ত স্বর্গপুরী উৎসবের সূচনা করে ছিলেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা নববর্ষে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে এ স্বর্গপূরী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উৎসবে বৌদ্ধদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে স্বর্গপূরী উৎসব সম্প্রীতির মহামিলন মেলায় পরিণত হয়।

এদিকে স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লী থেকে দলীয় ভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বৌদ্ধ কীর্তন সহকারে স্বর্গপুরী উৎসবে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর অংশ গ্রহনে স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন সম্পন্ন হয়। সম্প্রীতির এ উৎসবে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অংশ গ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতা সম্পন্ন হওয়ায় উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তারা ও প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের দায়ক-দায়ক-দায়িকারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত