ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

একসময়ের খরস্রোতা নদী এখন ফসলের মাঠ

একসময়ের খরস্রোতা নদী এখন ফসলের মাঠ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার খরস্রোতা নদীগুলো এখন বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। নদীর চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। ধরলা নদীসহ এর আশেপাশে বিভিন্ন নদ-নদীর বুকে জেগে ওঠা চর এখন যেন সবুজ ফসলের সমারোহ।

শুকনো মৌসুমে চরগুলোতে প্রান্তিক চাষিরা বোরো, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অন্যদিকে জীবিকার সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চল গুলো সবুজ ফসলে ভরে গেছে। এ যেন সবুজের এক মহাসমারোহ। অথচ মাত্র এক থেকে দেড় যুগ আগেও পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা ও বারোমাসিয়ায়। এসব নদীর প্রবল স্রোতের আতঙ্কে থাকতো নদী তীরবর্তী হাজারও বাসিন্দা। এখন পানি না থাকায় ধরলা-বারোমাসি নদীতে ছোট বড় প্রায় আড়াই শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদী গুলো প্রবাহ হারিয়ে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

শুকনো মৌসুমে ধরলা ও বারোমাসি নদীতে পানি না থাকায় মানুষজন পায়ে হেঁটে নদী চরে যাতায়াত করতে পারছেন। এ সময় ধরলার বুকে জেগে ওঠা চরে বোরো ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন নদী পাড়ের চাষিরা। শুধু ধরলা ও বারোমাসি নদীতে নয়, এই দুই নদী সংলগ্ন নীলকমলসহ আশেপাশের সব নদ-নদীর বুকেও শতশত বিঘা জমিতে কৃষকরা গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বোরো ধান ও ভুট্টার আবাদ করে ব্যপক ফসল ঘরে তুলে আসছেন। বছরে একবার এসব নদ-নদীর বুকে চাষাবাদ করে কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসলেও নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ডিঙি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে বোয়াল, কাতলা, রুই, টেংরা, ভেটকি, বৈরালীসহ নানান প্রজাতির মাছ শিকার করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে এসেছিলেন। পানি প্রবাহ না থাকায় এসব মাছের দেখা এখন আর মিলছে না।

ধরলা পাড়ের সোনাইকাজী এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, এক সময় এই ধরলা নদীই আমাদের ঘর-বাড়ি, ভীটে মাটি, আবাদি জমি-জমাসহ সব কিছুই গিলে নিয়েছিল। সেই ধরলা এখন শুকিয়ে গেছে। অনেকেই ধরলার আগ্রাসী রূপ দেখেছেন। ধরলার তীব্র ভাঙনে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন। এখন আমি প্রতি বছর ধরলার বুকে জেগে ওঠা পলিমাটিতে ৪ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করি। এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি গত বছরের মতো এ বছরও প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩০ মণ ধান ঘরে তুলতে পারবো। একই এলাকার কৃষক মকসেদ আলী ও মোন্নাফ আলী জানান, প্রায় ৮-১০ বছর ধরে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর বুকে বোরো এবং ভুট্টার আবাদ করে আসছি। প্রতি বছরই বোরো ও ভুট্টার ভালো ফলন হয়। আশা করছি এ বছরও ভালো ফলন হবে।

তারা আরও জানান, প্রত্যেকেই তিন বিঘা বোরো ও দুই বিঘা ভুট্টা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এ বছর খরচটা অনেক বেশি হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। ধান ও ভুট্টার ভালো দাম না পেলে তাদের এ মৌসুমে লোকসান গুনতে হবে বলে জানান। এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। এরমধ্যে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীর অববাহিকায় ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ২ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীর বুকে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। বর্তমানে খেত থেকে ভুট্টা তোলা হচ্ছে। গত বছরের মত এ বছরও বোরো এবং ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে কৃষকরা ভালো ফলন পাবে এবং যথাযথ দাম পাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত