নাটোরের বড়াইগ্রামে দেশব্যাপী আলোচিত মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার জুঁই (৭) হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অংশ হিসেবে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পাঁচ শিশুকিশোরসহ পাঁচজন দলবদ্ধ ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের পাঁচদিনের মাথায় বড়াইগ্রাম ও চাটমোহর থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে অভিযুক্ত পাঁচ শিশু-কিশোরকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য জানা যায়। গ্রেপ্তার পাঁচজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল রোববার এ ব্যাপারে পাবনার চাটমোহর থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল আলম হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা করেন। পরে তাদেরকে পাবনা আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার দিয়াড়গাড়ফা গ্রামের শাহীন আলীর ছেলে সিয়াম হোসেন, গাড়ফা উত্তরপাড়া গ্রামের আয়নাল হোসেনের ছেলে শেখ সাদী, শফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল্লাহ, সুলতান হোসেনের ছেলে সোহেল রানা এবং গাড়ফা দক্ষিণপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে সাকিব হোসেন (১৬)। সিয়াম স্থানীয় ডিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেলিরর ছাত্র এবং শেখ সাদী ও আব্দুল্লাহ অপকর্মের দায়ে মাদরাসা থেকে বহিষ্কৃত। সোহেল বিবাহিত দিনমজুর ও সাকিব ট্রাক্টর চালক। প্রেস ব্রিফিং সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা পহেলা বৈশাখের আনন্দ করার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নিজেরা টাকা তুলে দেহ ব্যবসায়ী নারী ভাড়া করার চেষ্টা করে এবং নেশা দ্রব্য গাঁজা কিনে। ঘটনার দিন গত (১৪ এপ্রিল) বিকালে তারা জুঁইয়ের বাড়ির পাশের আমবাগানে বসে গাঁজা সেবন করছিল। হঠাৎ জুঁই দাদীর বাড়ি থেকে বেড়ানো শেষে সেখানে আম কুড়াতে যায়।
এ সময় শেখ সাদি জুঁইকে সেখান থেকে জনৈক দুলালের কলাবাগানে নিয়ে যায় এবং চারজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা শিশুটিকে ধরাধরি করে পাশের ভুট্টার জমিতে নিয়ে যাওয়ার সময় জুঁইদের বাড়ির পাশে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসা সিয়াম বিষয়টি দেখে ফেলে। পরে তারা সিয়ামকেও প্রলুব্ধ করে শিশুটিকে পুনরায় ধর্ষণ করায়। এরপর তারা জুঁইয়ের পরনের লাল রঙের প্যান্ট গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে এবং ঘাড় মটকে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর এসিড জাতীয় দাহ্য পদার্থ দিয়ে তার মুখ ঝলসে দেয়। পরে তারা ভূট্টার জমিতে বিবস্ত্র লাশটি ফেলে রেখে চলে যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল দাদীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়ে নিখোঁজ হয় গাড়ফা প্রবাসী জাহিদুল ইসলামের শিশুকন্যা জুঁই। পরদিন বাড়ি থেকে মাত্র একশ’ গজ দূরে চাটমোহরের রামপুর বিলের একটি ভুট্টা খেতে তার বিবস্ত্র ও মুখমণ্ডল ঝলসানো লাশ পাওয়া যায়। ঐ দিন রাতে জুঁইয়ের মা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।